নির্বাচন পদ্ধতি । রাজনীতির পাঠ

নির্বাচন পদ্ধতি রাজনীতির অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নির্বাচন হল সাংবিধানিক নিয়মানুসারে জনগণের মতামত জানাবার ব্যবস্থা। ভোট দিয়ে জনগণ কোনো ব্যক্তি ও রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতায় আসার জন্য নির্বাচিত করে। বহু দেশেই নির্বাচন সংস্কার আন্দোলনের ম্ধ্যমে স্বতন্ত্ররূপ নিয়ে গড়ে উঠেছে।

নির্বাচন পদ্ধতি । রাজনীতি
নির্বাচন পদ্ধতি । রাজনীতি

দেশে দেশ অ্যাপ্রুভাল ভোটিং, সিঙ্গল ট্রান্সফারেবল ভোট, ইনস্ট্যান্ট রান অব ভোটিং অথবা কনডোরসেট ব্যবস্থার পক্ষে সওয়াল করা হচ্ছে, কিছু দেশে ছোটখাটো ভোটে এই পদ্ধতিগুলি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। যদিও সে দেশগুলিতে আরো গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনগুলিতে এখনও সেই প্রথাগত গণনা পদ্ধতিই ব্যবহার করা হচ্ছে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন ধরণের নির্বাচন পদ্ধতি দেখা যায়। সেগুলো হল:

নির্বাচন পদ্ধতি – ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট পদ্ধতি :

এই পদ্ধতি একটি দল বা প্রার্থীই শুধু মাত্র বিজয়ী হতে পারে। একক বিজয়ী ব্যবস্থার মধ্যে এই পদ্ধতিই সবচেয়ে জনপ্রিয়। এ পদ্ধতিতে যে প্রার্থীর ভোটারগণ একটি মাত্র পছ্ন্দ নির্বাচন করতে পারেন এবং অনেক প্রার্থীর মধ্যে যে সবচেয়ে এগিয়ে থাকবে সেই জয়ী হবেন। এক্ষেত্রে বিজয়ী প্রার্থী মোট ভোটের অধিকাংশের চেয়ে কম ভোটও পেতে পারেন। যেমন কোন এলাকায় তিনজন প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহন করলে ৩৫ শতাংশ ভোট প্রাপ্ত প্রার্থী বিজয়ী হতে পারেন, চারজন দাড়ালে ২৬ শতাংশ ভোটপ্রাপ্ত ব্যক্তিও বিজয়ী হতে পারেন।

নির্বাচন পদ্ধতি । রাজনীতির পাঠ
ঘোড়দৌড় থেকে এসেছে ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট নির্বাচন পদ্ধতি

এটি বলা যায় সব চেয়ে জনপ্রিয় নির্বাচন ব্যবস্থা। আমাদের দেশে ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট পদ্ধর্তিতে ভোট হয়। এই পদ্ধতিতে সমস্যা হল প্রতিটি আসনের অল্প অল্প ব্যবধান বিশাল ব্যবধান গড়ে তুলে – যেমন ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) যেখানে ২,৩০,৭৪,৭১৪ ভোট (মোট প্রদত্ত ভোটের ৪১.৪০ শতাংশ) পেয়ে জিতে ১৯৩টি সংসদীয় আসন। সেখানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২২,৩১০,২৭৬ ভোট (মোট প্রদত্ত ভোটের ৪০.০২ শতাংশ) পেয়ে ৬২ পায়। ১.০২ শতাংশ ভোটের ব্যবধান হয় ১৩১টি আসন।

নির্বাচন পদ্ধতি – আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক ব্যবস্থা :

একের অধিক বিজয়ী নির্বাচিত করার জন্য এমন নির্বাচন ব্যবস্থা অনুসরণ করা হয়। এই ব্যবস্থায় জনগনের প্রতিনিধি একটি দলের প্রতি জনগণের মতামতের আনুপাতিক ভিত্তিতে নির্বাচিত হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় কোন দেশের আইন সভার মোট আসন সংখ্যা ৩০০ হলে যে দল ৪০ শতাংশ ভোট পেয়েছে তারা এ পদ্ধতিতে ১২০টি শতাংশ আসন পাবে।

নির্বাচন পদ্ধতি – পছন্দানুক্রম ব্যবস্থা :

এর ইংরেজী নাম হলো “preferential voting methods” এই পদ্ধতিতে ভোটারকে তার পছন্দ অনুসারে প্রার্থীদের ক্রমবিন্যাস করতে বলা হয়। এক্ষেত্রে কোন পদ্ধতিতে তাকে প্রত্যেক প্রার্থীকেই পছন্দানুক্রমে স্থান দিতে হয় কোন কোন ক্ষেত্রে নূন্যতম সংখ্যক প্রার্থীকে পছন্দানুক্রমে স্থান দিতে বলা হয়।

এবার দেখে নেয়া যাক যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, শ্রীলঙ্কা, ও ভুটানের নির্বাচন ব্যবস্থা:

নির্বাচন পদ্ধতি – যুক্তরাজ্য :

যুক্তরাজ্যে ওয়েস্টমিন্সটার ঘরাণার দিকক্ষীয় শাসন ব্যবস্থা চালু আছে। ত্রয়োদশ শতকে ইংল্যান্ডে সংসদীয় ব্যবস্থা গড়ে ওঠার মধ্য দিয়ে আধুনিক নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সূচনা হয়। বৃটেনের পার্লামেন্টের আপার হাউস বা উচ্চকক্ষকে বলা হয় হাউস অফ লর্ডস বা লর্ডস সভা এবং লোয়ার হাউস বা নিম্নকক্ষ যাকে বলা হয় হাউস অফ কমন্স বা কমন্স সভা। হাউস অব কমন্সে নির্বাচিত হয় সাধারণ ভোটারদের ভোটে। শুধু তাই নয়, দেশের বৃহত্তর নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে সাধারণ ভোটারদের বেশ প্রভাব পড়ে।

এই নির্বাচনে যারা বিজয়ী হন, তারা হন কমন্স সভার সদস্য বা এমপি এবং এদের সদস্য পদের মেয়াদ থাকে পাচ বছর। পার্লামেন্টে নিম্নকক্ষে এরাই হন প্রকৃত ক্ষমতার অধিকারী। এমপিদের মধ্য থেকেই নির্বাচিত হন প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধীদলীয় নেতা। অন্যদিকে উচ্চকক্ষে লর্ডরা সদস্য হন তাদের বংশগত যোগ্যতায় অথবা সরকারের মনোনয়নে। এদের সদস্য পদের মেয়াদ থাকে আজীবন অথবা স্বেচ্ছায় অবসর নেওয়া পর্যন্ত।

নিম্নকক্ষ কর্তৃক পাস হওয়া কোনো বিল পর্যালোচনা করা এবং সেটা পুনর্বিবেচনার জন্য আবার নিম্নকক্ষে ফেরত পাঠানো ছাড়া আর বিশেষ কোনো ক্ষমতা উচ্চকক্ষ সদস্যদের বা লর্ডদের নেই। তাই যারা রাজনীতি করতে চান এবং প্রকৃত ক্ষমতার অধিকারী হয়ে দেশ পরিচালনা করতে চান তারা হাউস অফ কমন্স বা নিম্নকক্ষের সদস্য হতে চান। যুক্তরাজ্যে নির্বাচনের সময় বিগত সরকার ক্ষমতায় থাকেন।

নির্বাচন পদ্ধতি – মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র :

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনগুলি যুক্তরাষ্ট্রীয়, রাষ্ট্রীয় এবং স্থানীয় পর্যায়ে সরকারী কর্মকর্তাদের জন্য অনুষ্ঠিত হয়। ফেডারেল পর্যায়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনী কলেজের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে নির্বাচিত হন। ফেডারেল বিধানসভা, কংগ্রেস, সমস্ত সদস্যদের সরাসরি নির্বাচিত হয়। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে অনেক নির্বাচিত অফিস রয়েছে, প্রতিটি রাজ্য অন্তত একটি নির্বাচিত গভর্নর এবং আইনসভা আছে।

স্থানীয় পর্যায়ে, কাউন্সিল, শহর, শহর, শহরশাসন, বোরো এবং গ্রামগুলিতে নির্বাচিত অফিস রয়েছে। রাজনৈতিক বিজ্ঞানী জেনিফার লাহলেসের এক গবেষণায়, ২০১২ সালের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৫,১৯,৬৪২ জন নির্বাচিত কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতির একটি সরকার ব্যবস্থা রয়েছে, যার অর্থ নির্বাহী ও আইনসভা পৃথকভাবে নির্বাচিত হয়। আর্টিকেল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের একটিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতির জন্য যে কোনও নির্বাচন অবশ্যই সারা দেশ জুড়ে একদিনে অনুষ্ঠিত হবে; কংগ্রেসের অফিসের জন্য নির্বাচন বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠিত হতে পারে। কংগ্রেসিয়াল এবং রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতি চার বছরে একযোগে অনুষ্ঠিত হয় এবং মধ্যবর্তী কংগ্রেসীয় নির্বাচনে প্রতি দুই বছর অনুষ্ঠিত হয়।

সিনেটে ১০০ সদস্য এবং হাউস অফ রিপ্রেজেনটেটিভের ৪৩৫ সদস্য নির্বাচিত হন। সংবিধান অনুযায়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস কমপক্ষে ২৫ বছর বয়সী, কমপক্ষে সাত বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হওয়া উচিত এবং তারা যে রাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করে তার (আইনী) বাসিন্দা হতে হবে।

সেনেটর কমপক্ষে নয় বছর ধরে অন্তত ৩০ বছর বয়সী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হতে হবে এবং তারা যে রাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করে তার (আইনী) বাসিন্দা হতে হবে। রাষ্ট্রপতি অন্তত ৩৫ বছর বয়সী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রাকৃতিক জন্মগ্রহণকারী নাগরিক এবং অন্তত ১৪ বছর ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অধিবাসী হতে হবে। ব্যালট পেপারে উপস্থিত প্রার্থীর যোগ্যতা নিয়ন্ত্রণের জন্য রাষ্ট্রীয় আইন পরিষদের দায়িত্ব, যদিও ব্যালটটিতে পৌঁছানোর জন্য, প্রার্থী প্রায়ই আইনত সংজ্ঞায়িত সংখ্যার স্বাক্ষর সংগ্রহ করতে হবে।

নির্বাচনী দিনে পোলিং স্টেশনগুলিতে ভোট দিতে অক্ষম বা অনিচ্ছুক ভোটার অনুপস্থিতি ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দিতে পারেন।

নির্বাচন পদ্ধতি – ভারত :

ভারতের শাসনব্যবস্থা যুক্তরাষ্ট্রীয়। কেন্দ্রে এবং রাজ্যগুলিতে আলাদা আলাদা আইনসভা রয়েছে। কেন্দ্রের আইনসভার নাম সংসদ। ভারতীয় সংসদ দুই কক্ষবিশিষ্ট লোকসভা ও রাজ্যসভা। লোকসভায় রয়েছে ৫৪৩টি আসন। সর্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকারের ভিত্তিতে দেশের জনগণ এই ৫৪৩টি আসনের জন্য প্রতিনিধি নির্বাচন করেন।

প্রতি পাঁচ বছর অন্তর নির্বাচন হয়। রাজ্যসভার সদস্যসংখ্যা ২৪৫। এঁদের মধ্যে ২৩৩ জনকে নির্বাচিত করেন রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের আইনসভার সদস্যরা। রাজ্যসভার সদস্যদের মেয়াদ ছ’ বছর। প্রতি দু’ বছর অন্তর এক-তৃতীয়াংশ সদস্য অবসর নেন। রাজ্যসভার বাকি ১২ জন সদস্যকে সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে মনোনয়ন করা হয়।

কোনও কোনও রাজ্যের আইনসভা এক কক্ষবিশিষ্ট, নাম বিধানসভা। কোনও কোনও রাজ্যের আইনসভায় দু’টি কক্ষ রয়েছে বিধানসভা ও বিধান পরিষদ। রাজধানী দিল্লিতে ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল পুদুচেরিতে বিধানসভা রয়েছে। বিধানসভার সদস্যরা সর্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নির্বাচিত হন। এবং বিধান পরিষদের সদস্যরা রাজ্যসভার সদস্যদের মতো পরোক্ষ ভাবে নির্বাচিত হন।

ভারতে নির্বাচনের সময় বিগত সরকার ক্ষমতায় থাকেন। এ ছাড়াও রাজ্যগুলিতে স্থানীয় প্রশাসন তথা পুরসভা ও পঞ্চায়তের প্রতিনিধিরাও জনসাধারণের ভোটে নির্বাচিত হন।

নির্বাচন পদ্ধতি – শ্রীলঙ্কা :

শ্রীলঙ্কার রাজনীতি একটি রাষ্ট্রপতিশাসিত প্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কাঠামোয় সংঘটিত হয়। রাষ্ট্রপতি হলেন একাধারে রাষ্ট্রের প্রধান ও সরকার প্রধান। রাষ্ট্রের নির্বাহী ক্ষমতা সরকারের উপর ন্যস্ত। আইন প্রণয়নের ক্ষমতা সরকার এবং আইনসভা উভয়ের উপর ন্যস্ত। দ্বীপ রাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার সংসদ নির্বাচন কিছুটা জটিল।

গণতান্ত্রিক সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রী শ্রীলঙ্কার মোট সংসদীয় আসন সংখ্যা ২২৫টি। এর মধ্যে ১৯৬টি আসনে সরাসরি নির্বাচন হয় এবং বাকি ২৯টি আসনে নির্বাচন হয় আনুপাতিক হারে। এই ২৯ সংসদ সদস্যের পদকে বলা হয় ন্যাশনালিস্ট। একজন ভোটার ব্যালটে প্রথমে একটি রাজনৈতিক দলকে ভোট দেবেন। তারপর ভোটার সেই পার্টির সর্বোচ্চ তিনজনকে ভোট দিতে পারবেন। ভোটাররা যখন ভোট দেবেন তখন অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে যে কোনো তিনজনকে ভোট দিতে পারবেন।

এটাকে বলা হয় প্রিফারেন্সিয়াল ভোট। আবার ইচ্ছে করলে সিঙ্গেল ভোটও দিতে পারবেন। প্রথমে এক পার্ির্টকে ভোট দিয়ে পরে অন্য পার্টির মনোনীত ব্যক্তিকে ভোট দিলে সেই ভোট বাতিল হয়ে যাবে। এ ছাড়া মূল নির্বাচনের আগে ছিল পোস্টাল ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা। প্রতিটি জেলার সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীরা এই পোস্টাল ভোটে অংশ নেন ভোট গ্রহণের কয়েক দিন আগে।

সেখানে মোট ১৩টি নির্বাচনী এলাকা থেকে ১২ জন নির্বাচিত হবেন। এক একটি রাজনৈতিক দল ১২টি সংসদ সদস্য পদের জন্য ১৫ প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়। এই নির্বাচনে বিচ্ছিন্নভাবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ নেই। স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে হলে সব স্বতন্ত্র প্রার্থীকে একটি প্লাটফর্মে এসে তাদের প্রার্থিতা ঘোষণা করতে হবে এবং সে মোতাবেক নির্বাচন কমিশন তাদের স্বতন্ত্র প্রার্থীর জোট হিসেবে ঘোষণা দেবে।

নির্বাচন পদ্ধতি – নেপাল :

২০০৮ সালের মে মাস পর্যন্ত নেপাল একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্র ছিল। ২৪০ বছরের রাজতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে ঐ মাসের ২৮ তারিখে নেপালের আইনসভা সংবিধানে সংশোধন আনে এবং নেপালকে একটি প্রজাতন্ত্রে রূপান্তরিত করে। বর্তমানে নেপালের রাজনীতি একটি বহুদলীয় প্রজাতন্ত্রের কাঠামোতে সংঘটিত হয়। প্রধানমন্ত্রী হলেন সরকার প্রধান। সরকারের হাতে নির্বাহী ক্ষমতা ন্যস্ত। আইনসভার উপর আইন প্রণয়নের দায়িত্ব ন্যস্ত।

দেশটি ইউরোপের জার্মানিসহ অনেক দেশে যে আনুপাতিক ব্যবস্থা রয়েছে তার সাথে ব্রিটিশ পদ্ধতির সমন্বয়ে একটি মিশ্র প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা করেছে, যাকে একটি অনন্য পদ্ধতি বলা যায়। এই ব্যবস্থা অনুসারে নেপালে ২৭৫ আসনবিশিষ্ট সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ আসনে (১৬৫) ব্রিটিশ পদ্ধতি বা ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট পদ্ধতি অনুসারে নির্বাচন হয়, যেখানে সর্বোচ্চ প্রাপ্ত ভোটে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন।

আর বাকি এক-তৃতীয়াংশ আসনে (১১০) দলের পক্ষে যে ভোট পড়েছে, তার ভিত্তিতে আগে জমা দেয়া তালিকা থেকে ক্রমানুসারে প্রার্থী নির্বাচন করা হয়েছে। তুরস্ক, জার্মানিসহ কিছু দেশ রয়েছে, যেখানে দলের প্রাপ্ত ভোটের বিপরীতে দেয়া তালিকা থেকে পার্লামেন্টে আসন বরাদ্দ দেয়া হয়। আসন প্রাপ্তির জন্য দলের ন্যূনতম ভোট প্রাপ্তির সীমারেখা দেয়া আছে। তুরস্কে এই সংখ্যা হলো ১০ শতাংশ। নেপালে প্রত্যক্ষ ভোট আর আনুপাতিক ব্যবস্থার সমন্বয় করা হয়েছে। সেখানে আনুপাতিক ব্যবস্থায় আসন প্রাপ্তির ন্যূনতম ভোট প্রাপ্তির শর্ত ঠিক করা হয়েছে ৩ শতাংশ।

নির্বাচন পদ্ধতি – ভুটান :

ভূটান হল একটি রাজতন্ত্র বিশিষ্ট দেশ। এখানে বর্তমানে রাজতন্ত্র বিদ্যমান। ভূটানে অতীতে একটি পরম রাজতন্ত্র প্রচলিত ছিল। বর্তমানে এটি একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্র। ভূটানের রাজা, যার উপাধি ড্রাগন রাজা, হলেন রাষ্ট্রের প্রধান। মন্ত্রীদের একটি কাউন্সিল রাষ্ট্রের নির্বাহী কার্য পরিচালনা করে। সরকার ও জাতীয় সংসদ উভয়ের হাতে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা ন্যস্ত। এছাড়াও যে খেনপো উপাধিবিশিষ্ট দেশের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা রাজার সবচেয়ে কাছের পরামর্শদাতার একজন।

২০০৭ সালে একটি রাজকীয় আদেশবলে রাজনৈতিক দল নির্মাণের উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়া হয়। ২০০৮ সালে ভুটানের রাজা ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ শিথিল করেন। ভুটানে বইতে শুরু করে গণতন্ত্রের সুবাতাস। তা এখনো অব্যাহত রয়েছে। বিগত ১০ বছরে দেশটিতে গণতন্ত্র বিস্তৃতি লাভ করেছে।

ভুটানের দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ – একটি উচ্চকক্ষ, ন্যাশনাল কাউন্সিল বা জাতীয় পরিষদ এবং নিম্নকক্ষের জাতীয় পরিষদ নিয়ে গঠিত। উচ্চকক্ষ ২৫ জন সদস্য নিয়ে গঠিত: ২০ জন সদস্য আসে প্রতিটি জেলা থেকে নির্কাচিত হয়ে এবং ৫ জন কে নির্বাচনী আইন অনুযায়ী রাজা দ্বারা নিযুক্ত করা হয়। জাতীয় পরিষদে বছরে অন্তত দুবার সম্মেলন হয়। সদস্যদের সংখ্যা থেকে একজন চেয়ারপারসন ও ডেপুটি চেয়ারপার্সন নির্বাচিত হয়।

সদস্যদের এবং জাতীয় পরিষদের প্রার্থীরা রাজনৈতিক দলের অন্তর্ভুক্তি অধিষ্ঠিত হওয়া থেকে নিষিদ্ধ করা হয়। নিম্নকক্ষ গঠিত হয় সর্বোচ্চ ৫৫ জন সদস্যকে নিয়ে। যাদের কে সরাসরি প্রতিটি জেলা থেকে নাগরিকদের ভোটে নির্বাচনী আইন অনুযায়ী নির্বাচিত করা হয়। আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের এই ব্যবস্থায় প্রতিটি আসনের নির্বাচকমণ্ডলী জাতীয় সমাবেশের একজন সদস্য দ্বারা প্রতিনিধিত্ব করা হয়; ২০টি জেলার প্রতিটির জন্য ২-৭ জন সদস্যদের দ্বারা প্রতিনিধিত্ব করা আবশ্যক।

জাতীয় সংসদের আসনবিন্যাস প্রতি ১০ বছরে বন্টিত হয়। জাতীয় সমাবেশে বছরে অন্তত দুবার সম্মেলন হয় এবং তার সদস্যদের মধ্যে থেকে একজন স্পীকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হয়। সদস্য ও প্রার্থীদের রাজনৈতিক দলে অন্তর্ভুক্তি রাখার অনুমতি দেওয়া হয়। কিংডম অব ভুটানের সংবিধান মোতাবেক দেশে দুই দফা নির্বাচন পর্ব অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। প্রথম দফায় সব অংশগ্রহণকারী দলকে ভোটাররা ভোট প্রদান করে। এ পর্যায়ে সর্বোচ্চ ভোটপ্রাপ্ত দুটি দল দ্বিতীয় দফা বা চূড়ান্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। এতে বিজয়ী দলটি সরকার গঠন করে।

নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে আরও পড়ুন:

নির্বাচন পদ্ধতি । রাজনীতির পাঠ - বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের লোগো
বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন

Leave a Comment