হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে স্কুলছাত্রী বিউটি আক্তারকে ধর্ষণ ও হত্যা মামলার প্রধান আসামি বাবুল মিয়ার সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে রাজধানীতে মানববন্ধন করছে ইয়ুথ বাংলা কালচারাল ফোরাম। মঙ্গলবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের সভাপতি সুফি ফারুক ইবনে আবুবকরে পরিচালনায় উক্ত মানববন্ধনে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষসহ দেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রীরা অংশ নেয়।
সুফি ফারুক বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশে ধর্ষকদের বিচার না হওয়ার কারণে প্রতিদিনই ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে ৷ সুষ্ঠু বিচার না করে ধর্ষকদের আরও উৎসাহিত করা হচ্ছে ৷ আমরা অবিলম্বে বিউটি আক্তারের হত্যাকারী ওই ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানাচ্ছি। ’
তিনি বলেন, আমরা নারীর উন্নয়ন, ক্ষমতায়ন এসব বলে বলে যখন মুখে ফেনা তুলছি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জয়বাংলার চেতনায় স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের জন্য যখন বাতি জ্বালছি। ঠিক তার পূর্বে মুহূর্তে, বাতির নিচে অন্ধকার। বিউটি পড়ে আছে। বিউটির লাশ পড়ে আছে। হাওরের মাঠে পড়ে আছে ধর্ষিত, মৃত বিউটি।
ইয়ুথ বাংলা কালচারাল ফোরামের সভাপতি বলেন, বিউটি শায়েস্তাগঞ্জের দিনমুজর সায়েদ আলীর মেয়ে। মাত্র ১৬ বছরের কিশোরী। দুর্বৃত্ত বাবুল ও তার লোকেরা বিউটিকে ধরে নিয়ে যায়। মাস খানেক আটকে রাখে। আটকে রেখে চলে নিয়মিত নির্যাতন। দরিদ্র বাবা সায়েদ আলী ছোটেন এখানে সেখানে। মেয়ের সম্ভ্রম বাঁচাতে যায় কতজনের কাছে! পরে মামলাও করে। বিউটি পালিয়ে আসে ধর্ষকদের হাত থেকে। তবুও মুক্তি নেই। বিউটি ভেবেছিল, ধর্ষকের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে, পালিয়ে এসে। কিন্তু না, ধর্ষক বাবুল আবারও তাকে তুলে নিয়ে যায়। এবার আর শুধু ধর্ষণ নয়। ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে মামলার কারণে ধর্ষণের পর তাকে হত্যা করা হয়। কী বীভৎস! কী ভয়াবহ!
বিউটি হত্যাকরীর সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে ইয়ুথ বাংলা কালচারাল ফোরাম
প্রযুক্তিবিদ সুফি ফারুক বলেন, ধর্ষণ যে কতটা ভয়ঙ্কর প্রভাব ফেলে যায় নারীর মন ও শরীরে, তা কেবল ধর্ষিতা মাত্রই জানে। ধর্ষিত হচ্ছে নারীরা, একের পর এক। আমরা দর্শক, নির্বিকার। ধর্ষণ হচ্ছে নির্বিবাদে, নির্বিচারে। গোটা বাংলাদেশ হয়ে উঠছে ধর্ষকের অভয়ারণ্য। এখানে ধর্ষকেরা ধর্ষণের পর খুন করে যায়, যাতে ধর্ষিতা ধর্ষণের ঘটনাটি আর কাউকে না বলতে পারে। আর কেউ কেউ ধর্ষণের বীভৎস অভিজ্ঞতা নিয়ে না মরে বেঁচে থাকে। আমরা কোন ধর্ষণেরই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে পারিনি, দেইনি। তাই এই সামাজিক ব্যাধির প্রচলিত আইন সংশোধন ও দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের আওতায় এনে ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করা জোর দাবি জানাচ্ছি।
অভিনেত্রী তারিন জাহান বলেন, ‘ধর্ষণের জন্য পোশাককে দায়ী করে অনেকেই। কিন্তু এজন্য দায়ী মনমানসিকতা। যারা ধর্ষণ করে তারা একবারের জন্য ভাবে না, একজন নারীর গর্ভে জন্মেছে সেও। প্রতিদিন খবরের পাতা খুললে কিংবা ফেসবুকে ঢুকলে শুধু ধর্ষণের খবর চোখে পড়ে। তিনি বলেন, বিউটি আক্তারকে ধর্ষণের পরে হত্যাকারীর অতি দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি বাস্তবায়ন করতে হবে। স্বাধীন বাংলাদেশে এ ধরনের জঘন্য ঘটনা কোনোভাবেই কাম্য নয়।’