সাহির লুধিয়ানভি তার মা কে নিয়ে লিখেছিলেন।
“তু মেরে সাথ র্যাহেগা মুন্নে
ম্যায় তুঝে র্যাহেম কে সায়ে মে পলনে না দুঙ্গি
জিন্দগি কি কাড়ি ধুপ মে জালনে দুঙ্গি
তাকি তাপ তাপ কে তু ফওলাদ বানে
মা কি আওলাদ বানে”
ফওলাদ = ইস্পাত

এই লাইনগুলো যখন প্রথম দেখেছিলাম, মনে হয়েছিল আমার মায়ের কথাই যেন বলেছেন। আমার বাবার হত্যাকাণ্ডের পরে মা আমার আর সব ভাইবোনকে এলাকার বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। আমি একাই থাকতাম মায়ের সাথে। আমাদের স্ট্রাগলের সেই সময়গুলো চোখের সামনে আসে, মায়ের কথাগুলো সৃতিতে ভাসে।
সাহির ভারতের ফিল্ম জগতের তারকা গীতিকার ছিলেন। আজকের গীতিকার হিসেবে যে গুরুত্ব বা সম্মান, তার অনেকখানি তার দর কষাকষির কারণেই হয়েছে। তিনিই প্রথম দাবী করেছিলেন গান হিট হবার পেছনে গীতিকারের বড় ভূমিকা আছে। এজন্য সুরকার বা কণ্ঠশিল্পীর চেয়ে ১ টাকা হলেও বেশি দিতে হবে। সম্মানীর পরিমাণ যাই হোক, ১ টাকা যেন বেশি হয়।

দারুণ সব প্রেমের গান লিখে গেছেন অথচ তিনি নাকি প্রেমের গান লিখতে সবচেয়ে অপছন্দ করতেন। তার প্রেম ছিল মূলত প্রকৃতিতে। পাশাপাশি মানুষ, রাজনীতি এসব ছিল তার আগ্রহের বিষয়। সঙ্গত কারণেই তার প্রেমের গান হলেও সেই ক্যানভাস অনেক বড় হতো। প্রকৃতির বিভিন্ন উপাদান দিয়ে তিনি প্রেমের সঙ্গীত বিনির্মাণ করতেন।
সাহিরের আমার আরও দুটি প্রিয় লাইন, ওয়ান ইলেভেনে যে লাইনদুটো বারবার মনে হতো :
“সিতাম কি দউর মে হাম আহল-এ-দিল হি কাম আয়ে
জুবান পে নাজ থা যিনকো উয়ো বেজুবান নিকলে।”
সাহির সবসময় অন্যরকম চিন্তার মানুষ ছিলেন। ভারত পাকিস্তানের পার্টিশন ঘোষণার সময় সাহির পাকিস্তান অংশেই ছিলেন। ঘোষণার পরে মুসলিমরা পাকিস্তান যাচ্ছিল, হিন্দুরা ভারত আসছিলেন। তিনি মুসলিম হয়েও পাকিস্তান ছেড়ে ভারত চলে আসেন।
সাহির লুধিয়ানভির লেখা আমার সব প্রিয় গান:
১. যো ওয়াদা কিয়া উয়ো নিভানা পাড়েগা (ফিল্ম: তাজমহল)
পারছায়িয়া:
পারছায়িয়া লিখেছিলেন সাহির যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে। একটি বিশ্বযুদ্ধ, অন্য কারো যুদ্ধে ভারতীয় সৈন্যদের যোগদান, যুদ্ধের উপর বিদেশী শক্তির নিয়ন্ত্রণ এবং শান্তি প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি। এই কবিতাটি লেখা হয়েছিল 1944 বা 1945 সালের দিকে, যখন সাহির লাহোরে থাকতেন। শোনা যায় এই কবিতাটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ছাতান নামক একটি উর্দু ম্যাগাজিনে, যেটা সম্পাদনা করতেন সাহিরের ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের মধ্যে একজন “শোরিশ কাশ্মীরি”।
কবিতাটিতে সামগ্রিকভাবে সমাজের উপর যুদ্ধের ধ্বংসাত্মক প্রভাব তুলে ধরেছে সাহির। কবিতায় প্রথম দুজন মানুষের মধ্যে একটি রোমান্টিক সম্পর্কের বর্ণনা করা হয়েছে। এরপরে সেই সম্পর্কের পটভূমিতেই দেখা হয়েছে যুদ্ধ। যুদ্ধ কীভাবে আশে পাশের জীবনগুলোকে প্রভাবিত করছিলো সেগুলোও উঠে এসেছে।
জাভান রাত কে সিনে পে দুধিয়া আঁচল
মাচল রাহা হ্যায় কিসি হ্ওয়াব-ই-মারমারিন কি তারাহ
হাসিন ফুল হাসিন পতিয়ন হাসিন শাহেণ
লাচাক রাহি হ্যায় কিসি জিসম-এ-নাজনী কি তারাহ
ফাজা মে ঘুল সে গাএ হ্যায় উফুক কে নরম হুতুত
জমিন হাসিন হ্যায় খাওয়াবো কি সরজামিন কি তারাহ
তাসাব্বুরাত কি পারছায়িয়ান উবারতি হ্যায়ন
কাভি গুমান কি সুরত কাভি ইয়াকিন কি তারাহ
উয়ো পেড় জিন কে তালে হাম পানাহ লেতে থে
খাড়ি হ্যায় আজ ভি সাকিত কিসি আমিন কি তারাহ
উঁনহি কে সায়ে মে ফির আজ দো ধাড়াকতে দিল
হামোশ হোঁটো সে কুছ কাহনে সুননে আয়ে হ্যায়
না জানে কিতনি কাশাকাশ সে কিতনি কভিস সে
ইয়ে সোতে জাগতে লামহে চুরা কে লায়ে হ্যায়
ইয়াহি ফাজা থি ইয়াহি রুত ইয়াহি জামানা থা
ইয়াহিন সে হাম নে মহব্বত কি ইবতিদা কি থি
ধাধাকতে দিল সে লারাজতি হুই নিগাহোন সে
হুজুর-ই-গাইব মে নান্নি সি ইলতিজা কি থি
কি আরজু কে কানাভাল খিল কে ফুল হো যায়ে
দিল-ও-নজার কি দুয়ায়ে কুবুল হো যায়ে
তাসাব্বুরাত কি পারছায়িয়ান উবারতি হ্যায়ন
তুম আ রাহি হো জামানে কি আঁখ সে বাচ কার
নাজার ঝুকে হুয়ে অউর বদন চুরায়ে হুয়ে
খুদ আপনে কাদমো কি আহাত সে ঝেঁপতি ডারতি
খুদ আপনে সায়েকি জুম্বিশ সে খাউফ খায়ে হুয়ে
তাসাব্বুরাত কি পারছায়িয়ান উবারতি হ্যায়ন
রাওয়া হ্যায় ছোটি সি কশতি হাওয়ায়ো কে রুখ পার
নদী কে সাজ পে মাল্লা গীত গাতা হ্যায়
তুমহারা জিসম হার ইক লহর কে ঝাকোল সে
মিরি খুলি হুই বাহোঁ মে ঝুল জাতা হ্যায়
তাসাব্বুরাত কি পারছায়িয়ান উবারতি হ্যায়ন
ম্যায় ফুল তাঁক রাহা হুঁ তুমারে জোড়ে মে
তুমহারী আঁখ মাসাররাত সে ঝুকতি জাতী হ্যায়
না জানে আজ ম্যায় কি বাত কাহনে ভালা হুঁ
জাবান খুশক হ্যায় আওয়াজ রুখতি জাতী হ্যায়
তাসাব্বুরাত কি পারছায়িয়ান উবারতি হ্যায়ন
[ এখানের কিছু লাইন বাদ রাখা হলো পরে যুক্ত করা হবে ]
তাসাব্বুরাত কি পারছায়িয়ান উবারতি হ্যায়ন
তুমহারে ঘর মে কেয়ামত কা শোর বরপা হ্যায়
মহাজ-ই-জঙ্গ সে হরকরা তার লায়া হ্যায়
কি জিস কা জিকর তুমেন জিন্দেগি সে প্যারা থা
উয়ো ভাই নারগা-এ-দুশমান মেয় কাম আয়া হ্যায়
তাসাব্বুরাত কি পারছায়িয়ান উবারতি হ্যায়ন
হার এক গাম পে বাদ নামিওঁ কা জামঘট হ্যায়
হার এক মোড় পে রুসওয়ায়িয়ো কে মেলে হ্যায়
না দোস্তি না তাকাল্লুফ না দিলবারি না খুলুস
কিসি কা কোই নেহি আজ সব একলে হ্যায়
তাসাব্বুরাত কি পারছায়িয়ান উবারতি হ্যায়ন
ওয়ো রাহগুজার জো মিরে দিল কি তারাহ সুনি হ্যায়
না জানে তুম কো কাহাঁ লে কে জানেওয়ালি হ্যায়
তুমেহ খারিদ রাহে হ্যায় জমির কে কাতিল
উফুক পে খুন-এ-তামান্না-এ-দিল কি লালি হ্যায়
তাসাব্বুরাত কি পারছায়িয়ান উবারতি হ্যায়ন
তুম আজ হাজারো মিল ইয়াহাঁ সে দুউর কাহিন তানহা মে
ইয়া বাজম-ই-তারব-আরি মে
মেরে সাপনে বুনতি হোঙ্গী, বেয়ঠি আঘোষ পারাই মে
অউর ম্যায় সিনে মে গাম লে কার দিন-রাত মাশাককাত করতা হুঁ
জিনে কি খাতির মারতা হু
আপনে ফ্যান কো রুসয়া কর কে অগিয়ার কা দামান ভারত হুঁ
মজবুর হুঁ ম্যায় মজবুর হো তুম মজবুর ইয়ে দুনিয়া সারি হ্যায়
তান কা দুঃখ মান পার ভরি হ্যায়
মহাজ-ই-জঙ্গ = যুদ্ধক্ষেত্র
নারগা-এ-দুশমান = শত্রু দল
জামঘট = ভিড়
রুসওয়ায়িয়ো = অপমান
তাকাল্লুফ = চেনা পরিচয়
দিলবারি – সহানুভূতি
খুলুস = পবিত্রতা
জামির = বিবেক, হৃদয়
উফুক = দিগন্ত
খুন-এ-তামান্না-এ-দিল = আকাঙ্ক্ষা খুনের রক্ত
বাজম-ই-তারব-আরি = নাচ গানের অনুষ্টানে
আঘোষ = জড়িয়ে ধারা, কোলে বসা, ঘনিষ্ট হয়ে বসা
মাশাককাত = অমানুষিক শ্রম
রুসয়া = অপমান
আগিয়ার = আগন্তুক
সিরিজের বিভিন্ন ধরনের আর্টিকেল সূচি:
আমার সাহির লুধিয়ানভি সম্পর্কে আরও জানতে :
উইকিপিডিয়া : সাহির লুধিয়ানভি
ঘোষানা:
শিল্পীদের নাম উল্লেখের ক্ষেত্রে আগে জ্যৈষ্ঠ-কনিষ্ঠ বা অন্য কোন ধরনের ক্রম অনুসরণ করা হয়নি। শিল্পীদের সেরা রেকর্ডটি নয়, বরং ইউটিউবে যেটি খুঁজে পাওয়া গেছে সেই ট্রাকটি যুক্ত করা হল। লেখায় উল্লেখিত বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত যেসব সোর্স থেকে সংগৃহীত সেগুলোর রেফারেন্স ব্লগের বিভিন্ন যায়গায় দেয়া আছে। শোনার/পড়ার সোর্সের কারণে তথ্যের কিছু ভিন্নতা থাকতে পারে। আর টাইপ করার ভুল হয়ত কিছু আছে। পাঠক এসব বিষয়ে উল্লেখে করে সাহায্য করলে কৃতজ্ঞ থাকবো।
*** এই আর্টিকেলটির উন্নয়ন কাজ চলমান ……। আবারো আসার আমন্ত্রণ রইলো।