অজয় ভট্টাচার্য (৬ জুলাই, ১৯০৬ – ২৪ ডিসেম্বর, ১৯৪৩) ছিলেন বাংলা সাহিত্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তিনি একাধারে কবি, গীতিকার, নাট্যকার ও চিত্রপরিচালক হিসেবে বাংলা সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছেন। তার সৃষ্টিকর্ম আজও বাঙালির হৃদয়ে সজীব।
অজয় ভট্টাচার্যের জন্ম ত্রিপুরার শ্যামগ্রামে হলেও তিনি বড় হয়েছেন কুমিল্লায়, যেখানে তার পিতা রাজকুমার ভট্টাচার্য ওকালতি করতেন। শিক্ষাজীবনের সূচনা কুমিল্লার ঈশ্বর পাঠশালায়। ছাত্রাবস্থায় তিনি সাহিত্য, সংগীত ও নাটকে বিশেষ আগ্রহী ছিলেন। ১৯২৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে এম.এ. ডিগ্রি অর্জন করেন।
অজয় ভট্টাচার্য প্রায় দুই হাজারেরও বেশি গান রচনা করেছেন। তার প্রথম গান “হাসনুহানা আজ নিরালায়” সুর দিয়েছিলেন হিমাংশু দত্ত। পরে শচীন দেব বর্মণ, পঙ্কজ মল্লিক, রাইচাঁদ বড়াল প্রমুখ সুরকাররা তার গানে সুর দিয়েছেন। তার জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে “একটি পয়সা দাও গো বাবু”, “দুঃখে যাদের জীবন গড়া”, “বাংলার বধূ” উল্লেখযোগ্য।
নাট্যকার হিসেবে তিনি “অধিকার”, “শাপমুক্তি”, “নিমাই সন্ন্যাস”, “মহাকবি কালিদাস” প্রভৃতি চলচ্চিত্রের কাহিনী ও সংলাপ রচনা করেছেন। চিত্রপরিচালক হিসেবেও তিনি সফল ছিলেন। তার পরিচালিত চলচ্চিত্র দুটি হচ্ছে “অশোক” ও “ছদ্মবেশী”। 
অজয় ভট্টাচার্য কবিতাও লিখেছেন। তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে “রাতের রূপকথা”, “ঈগল ও অন্যান্য কবিতা”, “সৈনিক ও অন্যান্য কবিতা” উল্লেখযোগ্য। 
ছাত্রজীবনে তিনি কাজী নজরুল ইসলামের সংস্পর্শে আসেন এবং তার সম্পাদিত “ধূমকেতু” পত্রিকায় “উল্কা” নামে একটি কবিতা প্রকাশিত হয়। এটি ছিল তার প্রথম প্রকাশিত কবিতা। 
মাত্র ৩৭ বছর বয়সে, ২৪ ডিসেম্বর ১৯৪৩ সালে, অজয় ভট্টাচার্য পরলোকগমন করেন। স্বল্পায়ু জীবনে তিনি বাংলা সাহিত্য ও সংগীতে যে অবদান রেখেছেন, তা চিরস্মরণীয়।
অজয় ভট্টাচার্যের জীবন ও কর্ম বাংলা সংস্কৃতির অমূল্য সম্পদ। তার সৃষ্টি আমাদের অনুপ্রেরণা জোগায় এবং বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে তার নাম চিরভাস্বর।
আরও দেখুন:
