প্রতিপক্ষ যখন পাকিস্তানের জাতীয় টিম – তখন খেলার সাথে রাজনীতি মেশাবই !

“খেলার সাথে রাজনীতি মেশাবেন না” কথাটি বাংলাদেশের একটি বিশেষ গোষ্টি বারবার বলে।

যারা বলে, ‘খেলার সাথে রাজনীতি মেশাবেন না।’ তারা হয়তো জানে না ২৪ জুলাই ১৯৭১-এর কথা; নাম শুনেনি স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের। এ দিন পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগর স্টেডিয়ামে উড়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা।

আমরা বলি : প্রতিপক্ষ যখন পাকিস্তানের জাতীয় টিম - তখন খেলার সাথে রাজনীতি মেশাবই !
নদীয়ায় ম্যাচ শেষে কাজী সালাউদ্দিনের নেতৃত্বে বেরিয়ে আসছেন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্যরা
ছবি: সংগ্রহীত

নদীয়া একাদশের বিপক্ষে জাকারিয়া পিন্টুর নেতৃত্বে প্রথম খেলতে নামে ‘বেঙ্গল টাইগার্স’রা। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণে নির্দেশনা ছিল ‘যার যা কিছু আছে, তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে’। এই মন্ত্রে মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে গঠন করা হয় ‘স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল’। আন্তর্জাতিক বিধিবিধানের ভয়ে ভীত না হয়ে, খেলা শুরুর আগে জাতীয় পতাকা নিয়ে মাঠ প্রদক্ষিণ করেন এই দলের অকুতোভয় সদস্যরা। এ সময় জাতীয় সঙ্গীতও বাজানো হয়। স্বাধীন বাংলা দলের হয়ে প্রথম গোল করেন শাহজাহান। ম্যাচটি ২-২ গোলে ড্র হয়।

এ ম্যাচ নিয়ে হই হট্টগোল কম হয়নি বিশ্বজুড়ে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সমালোচনা করে এমন ম্যাচের। পরের দিন, স্বীকৃতি ছাড়া বাংলাদেশের পতাকা ওড়ানোর নদীয়ার জেলা প্রশাসককে চাকরীচ্যুত করা হয় আর অফিসিয়াল একটি দল নামানোয় ভারতীয় ফুটবল এসোসিয়েশন (আইএফএ) বাধ্য হয় নদীয় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সহযোগী পদ বাতিল করতে।

এই ঘটনার পর প্রতিপক্ষ আর অফিসিয়াল নাম ব্যবহার করতে পারেনি। এজন্যই ৮ আগস্ট কলকাতার অন্যতম ফুটবল পরাশক্তি মোহনবাগান খেলেছে ‘গোষ্টপাল একাদশ’ নামে।

এভাবে আমাদের ইতিহাসের এই নায়কেরা ভারতের বিভিন্ন এলাকায় মোট ১৬টি ম্যাচ খেলে স্বাধীনতা সংগ্রামের পক্ষে জনমত গড়ে তোলার পাশাপাশি ফান্ড সংগ্রহ করে। ম্যাচগুলো থেকে আয়কৃত ৩.৫ লাখ ভারতীয় রুপি মুক্তিযুদ্ধের ফান্ডে জমা দেয়া হয়। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল ভারতের বিভিন্ন স্থানে মোট ১২ টি খেলায় জয়লাভ করে।

সর্বশেষ খেলাটি অনুষ্ঠিত হয় মুম্বাই তে যেখানে মহারাষ্ট্র ফুটবল দলের নেতৃত্ব দেন ভারতের ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক নবাব মনসুর আলী খান পতৌদি। দিলীপ কুমার এসেছিলেন ম্যাচটি দেখতে এবং এক লক্ষ রুপি অনুদান দেন দলকে।

৩৪ জন খেলোয়াড়, সাথে ম্যানেজার এবং কোচসহ সর্বমোট ৩৬ জন নিয়ে গড়া ফুটবল দলের প্রশিক্ষক ছিলেন ননী বসাক এবং ব্যবস্থাপক ছিলেন তানভীর মাজহারুল ইসলাম তান্না।

খেলোয়াড়রা হলেন: জাকারিয়া পিন্টু (অধিনায়ক), প্রতাপ শংকর হাজরা (সহঅধিনায়ক), আলী ইমাম, মোহাম্মদ কায়কোবাদ, অমলেশ সেন, আইনুল হক, শেখ আশরাফ আলী, বিমল কর, শাহজাহান আলম, মনসুর আলী লালু, কাজী সালাউদ্দিন, এনায়েতুর রহমান, কে এন নওশেরুজ্জামান, সুভাষ সাহা, ফজলে হোসাইন খোকন, আবুল হাকিম, তসলিম উদ্দিন শেখ, আমিনুল ইসলাম, আব্দুল মমিন জোয়ারদার, মনিরুজ্জামান পেয়ারা, সাত্তার, প্রাণগোবিন্দ কুণ্ডু, মুজিবর রহমান, মেজর জেনারেল (অব.) খন্দকার নুরুন্নবী, লুৎফর রহমান, অনিরুদ্ধ চ্যাটার্জি, সনজিত কুমার দে, মাহমুদুর রশিদ, সাইদুর রহমান প্যাটেল, দেওয়ান মোহাম্মদ সিরাজ উদ্দিন ও নিহার কান্তি দাস প্রমুখ।

পৃথিবীর ইতিহাসে যুদ্ধকালীন প্রথম ফুটবল দল এটি। বর্তমানে ফিলিস্তিন ফুটবল দল এ ধরনের তহবিল সংগ্রহ ও জনমত গঠন করছে।

এবার নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন ‘খেলার সাথে রাজনীতি মেশাবেন না’ কারা বলে!

আমরা বলি : প্রতিপক্ষ যখন পাকিস্তানের জাতীয় টিম – তখন খেলার সাথে রাজনীতি মেশাবই !

পড়তে পারেন: