প্রিয় সব দেশের গানের গীতিকার সুরকারদের একবার স্মরণ করি ..

দেশের গানের গীতিকার সুরকার – একেকটি দেশাত্মবোধক গান একেকটি অস্ত্রের চেয়েও কোটিগুণ শক্তিশালী। অথচ আমরা আমাদের খুব প্রিয় গানেরও শুধুমাত্র গায়ক-গায়িকাকেই মনে রাখি। মনে রাখিনা গানটির জন্মদাতা গীতিকার ও সুরকারদের নাম। খুব কম মানুষই আছেন যারা জানার দরকারও বোধ করেন না। অথচ এই গীতিকার-সুরকার না হলে গানটির সৃষ্টিই হতো না। সেই গীতিকার-সুরকাররাই থেকে যান ন্যূনতম সম্মান বঞ্চিত। এজন্যেই গীতিকার কাওসার আহমেদ চৌধুরী আক্ষেপ করে গান-রচনাকে মাতৃঘাতী শিল্প বলে অভিহিত করেছেন।

আসুন এই স্বাধীনতার মাসে প্রিয় সব দেশের গানের গীতিকার ও সুরকারদের অন্তত একবার স্মরণ করি। তাদের নামগুলো একবার জেনে নেবার চেষ্টা করি। এখানে আমাদের সবচেয়ে পরিচিত দেশাত্মবোধক বাংলা গানের গীতিকার ও সুরকারদের নাম উল্লেখ করা হলো :

 

প্রিয় সব দেশের গানের গীতিকার সুরকারদের একবার স্মরণ করি .. Gazi Mazharul Anwar [ গাজী মাজহারুল আনোয়ার ]
গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার [ Lyricist Gazi Mazharul Anwar ]

 

 

Table of Contents

প্রিয় সব দেশের গানের গীতিকার সুরকার :

জয় বাংলা, বাংলার জয় [ গীতিকার : গাজী মাজহারুল আনোয়ার, সুরকার : আনোয়ার পারভেজ ]

জয় বাংলা বাংলার জয়।।
হবে হবে হবে, হবে নিশ্চয়
কোটি প্রাণ এক সাথে জেগেছে অন্ধরাতে
নতুন সূর্য ওঠার এই তো সময়।।
বাংলার প্রতি ঘর ভরে দিতে
চাই মোরা অন্নে।।
আমাদের রক্তে টগবগ দুলছে
মুক্তির রিক্ত তারুণ্যে।।

নেই ― ভয়
হস্ত হউক রক্তের প্রখ্যাত ক্ষয়।
আমি করি না করি না করি না ভয়।
অশোকের ছায় যেন রাখালের বাঁশরী
হয়ে গেছে একেবারে স্তব্ধ।।

চারিদিকে শুনি আজ নিদারুণ হাহাকার
আর ঐ কান্নার শব্দ।।
শাসনের নামে চলে শোষণের
সুকঠিন যন্ত্র।।
শব্দের হুঙ্কারে শৃঙ্খল ভাঙতে
সংগ্রামী জনতা অতন্দ্র।

আর ― নয়।
তিলেতিলে মানুষের এই পরাজয়।।
আমি করি না করি না করি না ভয়।
জয় বাংলা বাংলার জয়।।

 

প্রিয় সব দেশের গানের গীতিকার সুরকারদের একবার স্মরণ করি .. - Anwar Pervez, আনোয়ার পারভেজ
সুরকার আনোয়ার পারভেজ [ Composer Anwar Pervez ]

 

 

একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয় [ গীতিকার : গাজী মাজহারুল আনোয়ার, সুরকার : আনোয়ার পারভেজ ]

একবার যেতে দে না

আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়।।
যেথায় কোকিল ডাকে কুহু
দোয়েল ডাকে মুহু মুহু
নদী যেথায় ছুটে চলে
আপন ঠিকানায়।

পিদিম জ্বালা সাঁঝের বেলা
শান বাঁধানো ঘাটে।
গল্প কথার পানশী ভিড়ে
রুপ কাহিনীর বাটে।
মধুর মধুর মায়ের কথায়
প্রান জুড়িয়ে যায়।

ফসল ভরা স্বপ্ন ঘেরা
পথ হারানো ক্ষেতে।
মৌ মৌ মৌ গন্ধে যেথায়
বাতাস থাকে মেতে।
মমতারই শিশিরগুলো
জড়িয়ে থাকে পায়।

 

একতারা তুই দেশের কথা বল রে এবার বল [ গীতিকার : গাজী মাজহারুল আনোয়ার, সুরকার : আনোয়ার পারভেজ ]

একতারা তুই দেশের কথা
বলরে এবার বল।
আমাকে তুই বাউল করে
সঙ্গে নিয়ে চল।

জীবন মরন মাঝে
তোর সুর যেন বাজে।
জীবন মরন মাঝে
তোর সুর যেন বাজে।

একতারা তুই দেশের কথা
বলরে এবার বল।
আমাকে তুই বাউল করে
সঙ্গে নিয়ে চল।

একটি গানই আমি শুধু
গেয়ে যেতে চাই।
বাংলা আমার আমি যে তার
আর তো চাওয়া নাই রে…
আর তো চাওয়া নাই।
একটি গানই আমি শুধু
গেয়ে যেতে চাই।
বাংলা আমার আমি যে তার
আর তো চাওয়া নাই রে…
আর তো চাওয়া নাই।

প্রানের প্রিয় তুমি
মোর সাধের জন্মভূমি।
প্রানের প্রিয় তুমি
মোর সাধের জন্মভূমি।

একতারা তুই দেশের কথা
বলরে এবার বল।
আমাকে তুই বাউল করে
সঙ্গে নিয়ে চল।

একটি কথাই শুধু আমি
বলে যেতে চাই।
বাংলায় আমার সুখে দুঃখে
হয় যেন গো ঠাই রে
হয় যেন গো ঠাই।
একটি কথাই শুধু আমি
বলে যেতে চাই।
বাংলায় আমার সুখে দুঃখে
হয় যেন গো ঠাই রে
হয় যেন গো ঠাই।

তোমায় বরন করে
যেন যেতে পারি মরে।
তোমায় বরন করে
যেন যেতে পারি মরে।

একতারা তুই দেশের কথা
বলরে এবার বল।
আমাকে তুই বাউল করে
সঙ্গে নিয়ে চল।

জীবন মরন মাঝে
তোর সুর যেন বাজে।
জীবন মরন মাঝে
তোর সুর যেন বাজে।
একতারা তুই দেশের কথা
বলরে এবার বল।
আমাকে তুই বাউল করে
সঙ্গে নিয়ে চল।

 

প্রিয় সব দেশের গানের গীতিকার সুরকারদের একবার স্মরণ করি .. Mohammad Rafiquzzaman, মোহাম্মদ রফিকুজ্জামান
গীতিকার মোহাম্মদ রফিকুজ্জামান [ Lyricist Mohammad Rafiquzzaman ]

সেই রেল লাইনের ধারে মেঠো পথটার পাড়ে [ গীতিকার : মোহাম্মদ রফিকুজ্জামান, সুরকার : আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল ]

সেই রেল লাইনের ধারে মেঠো পথটার পাড়ে দাড়িয়ে
এক মধ্যবয়সী নারী এখনো রয়েছে হাত বাড়িয়ে
সেই রেল লাইনের ধারে মেঠো পথটার পাড়ে দাড়িয়ে
এক মধ্যবয়সী নারী এখনো রয়েছে হাত বাড়িয়ে

খোকা ফিরবে, ঘরে ফিরবে
কবে ফিরবে, নাকি ফিরবে না
খোকা ফিরবে, ঘরে ফিরবে
কবে ফিরবে, নাকি ফিরবে না

দৃষ্টি থেকে তার বৃষ্টি গেছে কবে শুকিয়ে
সে তো অশ্রু মোছেনা আর গোপনে আঁচলে মুখ লুকিয়ে
দৃষ্টি থেকে তার বৃষ্টি গেছে কবে শুকিয়ে
সে তো অশ্রু মোছেনা আর গোপনে আঁচলে মুখ লুকিয়ে
শুধু শূণ্যে চেয়ে থাকে, যেন আকাশের সীমা ছাড়িয়ে

খোকা ফিরবে, ঘরে ফিরবে
কবে ফিরবে, নাকি ফিরবে না

সেই রেল লাইনের ধারে মেঠো পথটার পাড়ে দাড়িয়ে
এক মধ্যবয়সী নারী এখনো রয়েছে হাত বাড়িয়ে

খোকা ফিরবে, ঘরে ফিরবে
কবে ফিরবে, নাকি ফিরবে না
খোকা ফিরবে, ঘরে ফিরবে
কবে ফিরবে, নাকি ফিরবে না

দস্যি ছেলে সেই যুদ্ধে গেলো, ফিরলো না আর
আজও শূণ্য হৃদয়ে তার গুমড়ে গুমড়ে যায় হাহাকার
দস্যি ছেলে সেই যুদ্ধে গেলো, ফিরলো না আর
আজও শূণ্য হৃদয়ে তার গুমড়ে গুমড়ে যায় হাহাকার
খোকা আসবে, ঘরে আসবে যেন মরণের সীমা ছাড়িয়ে

খোকা ফিরবে, ঘরে ফিরবে
কবে ফিরবে, নাকি ফিরবে না

সেই রেল লাইনের ধারে মেঠো পথটার পাড়ে দাড়িয়ে
এক মধ্যবয়সী নারী এখনো রয়েছে হাত বাড়িয়ে

খোকা ফিরবে, ঘরে ফিরবে
কবে ফিরবে, নাকি ফিরবে না
খোকা ফিরবে, ঘরে ফিরবে
কবে ফিরবে, নাকি ফিরবে না
খোকা ফিরবে, ঘরে ফিরবে
কবে ফিরবে, নাকি ফিরবে না
খোকা ফিরবে, ঘরে ফিরবে
কবে ফিরবে, নাকি ফিরবে না

গীতিকার ও সুরকার আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল [ Composer & Lyricist Ahmed Imtiaz Bulbul ]
গীতিকার ও সুরকার আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল [ Composer & Lyricist Ahmed Imtiaz Bulbul ]

একাত্তরের মা জননী, কোথায় তোমার মুক্তিসেনার দল? [ গীতিকার ও সুরকার : আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল ]

একাত্তরের মা জননী, কোথায় তোমার মুক্তিসেনার দল?
একাত্তরের মা জননী, কোথায় তোমার মুক্তিসেনার দল?
যারা অস্ত্র হাতে ধরেছিল,
মাগো, তোমার তরে মরেছিল,
ও মা, যাদের ভয়ে পালিয়েছিল শত্রুসেনার দল।
ও ও ও ও মা আ আ আ আ আ
একাত্তরের মা জননী, কোথায় তোমার মুক্তিসেনার দল?
একাত্তরের মা জননী, কোথায় তোমার মুক্তিসেনার দল?

আজও কেন তোমার বুকে জ্বলছে আগুন,
চলছে গুলি, মরছে মানুষ?
জবাব তোমায় দিতেই হবে মা গো,
জবাব তোমায় দিতেই হবে মা।
সন্ত্রাসীদের হাতে কেন জিম্মি তুমি,
স্বদেশ আমার, মাতৃভূমি?
জবাব তোমায় দিতেই হবে মা গো,
জবাব তোমায় দিতেই হবে মা।
কেন বিদ্যালয়ে ফুটছে বোমা?
এই কি পেলাম শিক্ষা ও মা?
লাঞ্চিত আজ শিক্ষা গুরু চোখে দুঃখের জল!
একাত্তরের মা জননী, কোথায় তোমার মুক্তিসেনার দল?
একাত্তরের মা জননী, কোথায় তোমার মুক্তিসেনার দল?

আজও কেন তোমার বুকে ঘুরছে তারা,
একাত্তরের দালাল যারা?
জবাব তোমায় দিতেই হবে মা গো,
জবাব তোমায় দিতেই হবে মা।
লাখো লাখো শহিদ কেন রক্ত দিল,
এই কি তাদের স্বপ্ন ছিল?
জবাব তোমায় দিতেই হবে মা গো,
জবাব তোমায় দিতেই হবে মা।
ও মা রক্তে ভেজা এই না মাটি,
জীবন দিয়ে রাখব খাটি।
শপথ নিলাম আজকে তরুণ ছাত্রছাত্রী দল।

একাত্তরের মা জননী, কোথায় তোমার মুক্তিসেনার দল?
একাত্তরের মা জননী, কোথায় তোমার মুক্তিসেনার দল?
যারা অস্ত্র হাতে ধরেছিল,
মাগো, তোমার তরে মরেছিল,
ও মা, যাদের ভয়ে পালিয়েছিল শত্রুসেনার দল।
ও ও ও ও মা আ আ আ আ আ
একাত্তরের মা জননী, কোথায় তোমার মুক্তিসেনার দল?
একাত্তরের মা জননী, কোথায় তোমার মুক্তিসেনার দল?

 

গীতিকার ও সুরকার গোবিন্দ হালদার [ Composer & Lyricist Gobinda Halder ]
গীতিকার ও সুরকার গোবিন্দ হালদার [ Composer & Lyricist Gobinda Halder ]

মোরা একটি ফুলকে বাঁচাব বলে [ গীতিকার : গোবিন্দ হালদার, সুরকার : আপেল মাহমুদ ]

মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি
মোরা একটি মুখের হাসির জন্য অস্ত্র ধরি

যে মাটির চির মমতা আমার অঙ্গে মাখা
যার নদী জল ফুলে ফলে মোর স্বপ্ন আঁকা
যে দেশের নীল অম্বরে মন মেলছে পাখা
সারাটি জনম সে মাটির দানে বক্ষ ভরি

মোরা নতুন একটি কবিতা লিখতে যুদ্ধ করি
মোরা নতুন একটি গানের জন্য যুদ্ধ করি
মোরা একখানা ভালো ছবির জন্য যুদ্ধ করি
মোরা সারা বিশ্বের শান্তি বাঁচাতে আজকে লড়ি

যে নারীর মধু প্রেমেতে আমার রক্ত দোলে
যে শিশুর মায়া হাসিতে আমার বিশ্ব ভোলে
যে গৃহ কপোত সুখ স্বর্গের দুয়ার খোলে
সে শান্তির শিবির বাঁচাতে শপথ করি

মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি
মোরা একটি মুখের হাসির জন্য অস্ত্র ধরি

 

সুরকার ও গায়ক আপেল মাহমুদ [ Singer & Composer Apel Mahmood ] প্রিয় সব দেশের গানের গীতিকার সুরকারদের একবার স্মরণ করি ..
সুরকার ও গায়ক আপেল মাহমুদ [ Singer & Composer Apel Mahmood ]

এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা [ গীতিকার : গোবিন্দ হালদার, সুরকার : আপেল মাহমুদ ]

এক সাগর রক্তের বিনিময়ে
বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা
আমরা তোমাদের ভুলব না।
আমরা তোমাদের ভুলব না।

দুঃসহ এ বেদনার কণ্টক পথ বেয়ে
শোষণের নাগপাশ ছিঁড়লে যারা
আমরা তোমাদের ভুলব না।
আমরা তোমাদের ভুলব না।

যুগের নিষ্ঠুর বন্ধন হতে
মুক্তির এ বারতা আনলে যারা
যুগের নিষ্ঠুর বন্ধন হতে
মুক্তির এ বারতা আনলে যারা
আমরা তোমাদের ভুলব না।
ভুলব না… ভুলব না…

এক সাগর রক্তের বিনিময়ে
বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা
আমরা তোমাদের ভুলব না।
আমরা তোমাদের ভুলব না।

কৃষাণ-কৃষাণীর গানে গানে
কৃষাণ-কৃষাণীর গানে গানে
পদ্মা-মেঘনার কলতানে
বাউলের একতারাতে
বাউলের একতারাতে
আনন্দ ঝংকারে
আনন্দ ঝংকারে
তোমাদের নাম ঝংকৃত হবে।
ঝংকৃত হবে… ঝংকৃত হবে… ঝংকৃত হবে….

নতুন স্বদেশ গড়ার পথে
তোমরা চিরদিন দিশারী রবে।
নতুন স্বদেশ গড়ার পথে
তোমরা চিরদিন দিশারী রবে।
আমরা তোমাদের ভুলব না।।
ভুলব না….ভুলব না….ভুলব না…

এক সাগর রক্তের বিনিময়ে
বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা
আমরা তোমাদের ভুলব না।
আমরা তোমাদের ভুলব না।

 

তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দেব রে [ গীতিকার ও সুরকার : আপেল মাহমুদ ]

তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর,
পাড়ি দিব রে
আমরা ক’জন নবীন মাঝি
হাল ধরেছি রে।।

জীবন কাটে যুদ্ধ করে
প্রাণের মায়া সাঙ্গ করে
জীবনের স্বাদ নাহি পাই -২
ঘর-বাড়ির ঠিকানা নাই
দিন-রাত্রি জানা নাই
চলার ঠিকানা সঠিক নাই
জানি শুধু চলতে হবে
এ তরী বাইতে হবে
আমি যে সাগর মাঝি রে।

জীবনের রঙে মনকে টানে না
ফুলের ঐ গন্ধ কেমন জানি না
জ্যোৎস্নার দৃশ্য চোখে পড়ে না
তারাও তো ভুলে কভু ডাকে না
জীবনের রঙে মনকে টানে না

বৈশাখের ওই রুদ্র ঝড়ে
আকাশ যখন ভেঙে পড়ে
ছেঁড়া পাল আরও ছিঁড়ে যায় -২
হাতছানি দেয় বিদ্যুৎ আমায়
হঠাৎ কে যে শঙ্খ শোনায়
দেখি ঐ ভোরের পাখি গায়

তবু তরী বাইতে হবে
খেয়া পারে নিতে হবে
যতই ঝড় উঠুক সাগরে।
তীরহারা এই ঢেউয়ের
সাগর পারি দিব রে।

 

এক নদী রক্ত পেরিয়ে বাংলার আকাশে [ গীতিকার ও সুরকার : খান আতাউর রহমান]

শিল্পীঃ শাহনাজ রহমাতুল্লাহ

এক নদী রক্ত পেরিয়ে
বাংলার আকাশে রক্তিম সূর্য আনলে যারা
তোমাদের এই ঋণ কোন দিন শোধ হবে না।
না না না শোধ হবে না।
মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সাত কোটি মানুষের
জীবনের সন্ধান আনলে যারা
সে দানের মহিমা কোন দিন ম্লান হবে না
না না না ম্লান হবে না।।

হয়ত বা ইতিহাসে তোমাদের নাম লেখা রবে না
বড় বড় লোকেদের ভীড়ে
জ্ঞানী আর গুনীদের আসরে
তোমাদের কথা কেউ কবে না।
তবু হে বিজয়ী বীর মুক্তিসেনা
তোমাদের এই ঋণ কোন দিন শোধ হবে না।
না না না শোধ হবে না।।

থাক ওরা পড়ে থাক ইতিহাস নিয়ে
জীবনের দীনতা হীনতা নিয়ে।

তোমাদের কথা রবে সাধারণ মানুষের ভীড়ে
মাঠে মাঠে কিষাণের মুখে
ঘরে ঘরে কিষাণীর বুকে
স্মৃতি বেদনার আঁখি নীড়ে।
তবু হে বিজয়ী বীর মুক্তিসেনা
তোমাদের এই ঋণ কোন দিন শোধ হবে না।
না না না শোধ হবে না।।

 

পূর্বদিগন্তে সূর্য উঠেছে [ গীতিকার : গোবিন্দ হালদার, সুরকার : সমর দাস ]

পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে রক্ত লাল রক্ত লাল রক্ত লাল,
জোয়ার এসেছে জনসমুদ্রে রক্ত লাল রক্ত লাল রক্ত লাল॥
বাঁধন ছেঁড়ার হয়েছে কাল
হয়েছে কাল হয়েছে কাল হয়েছে কাল
জোয়ার এসেছে জনসমুদ্রে রক্ত লাল রক্ত লাল রক্ত লাল।

শোষণের দিন শেষ হয়ে আসে
অত্যাচারীরা কাঁপে আজ ত্রাসে॥
রক্তে আগুন প্রতিরোধ করে
নয়া বাংলার নয়া সকাল নয়া সকাল নয়া সকাল।
পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে (ঐ)

আর দেরি নয় উড়াও নিশান
রক্তে বাজুক প্রলয়েরও বিষাণ॥
বিদ্যুৎ গতি হোক অভিযান
ছিঁড়ে ফেলো সব শত্রু জাল শত্রু জাল, শত্রু জাল।
পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে (ঐ)

 

নোঙ্গর তোলো তোলো [ গীতিকার : নইম গহর, সুরকার : সমর দাস ]

নোঙ্গর তোল তোল
সময় যে হল হল
নোঙ্গর তোল তোল।।
(হেইয়া রে, হেইয়া হো,
ও মাঝি ভাই, মাঝি ভাই)
হাওয়ার বুকে নৌকা এবার জোয়ারে ভাসিয়ে দাও,

শক্ত মুঠির বাঁধনে বাঁধনে বজ্র বাঁধিয়া নাও,
সমুখে এবার দৃষ্টি তোমার
পেছনের কথা ভোল।।
দূর দিগন্তে সূর্য রথে দৃষ্টি রেখেছ স্থির,
সবুজ আশার স্বপ্নেরা আজ, নয়নে করেছে ভিড়,
হৃদয়ে তোমার মুক্তির আলো,
আলোর দুয়ার খোল।

 

মুক্তির মন্দির সোপানতলে [ গীতিকার : মোহিনী চৌধুরী, সুরকার : কৃষ্ণচন্দ্র দে ]

মুক্তির মন্দির সোপানতলে
কত প্রাণ হল বলিদান,
লেখা আছে অশ্রুজলে ।।

কত বিপ্লবী বন্ধুর রক্তে রাঙা,
বন্দীশালার ওই শিকল ভাঙ্গা
তাঁরা কি ফিরিবে আজ সু-প্রভাতে,
যত তরুণ অরুণ গেছে অস্তাচলে।।

যাঁরা স্বর্গগত তাঁরা এখনও জানেন
স্বর্গের চেয়ে প্রিয় জন্মভুমি
এসো স্বদেশ ব্রতের মহা দীক্ষা লভি
সেই মৃত্যুঞ্জয়ীদের চরণ চুমি।

যাঁরা জীর্ণ জাতির বুকে জাগালো আশা,
মৌন মলিন মুখে জোগালো ভাষা
আজি রক্ত কমলে গাঁথা মাল্যখানি
বিজয় লক্ষ্মী দেবে তাঁদেরই গলে।

 

সোনা সোনা সোনা লোকে বলে সোনা [ গীতিকার ও সুরকার : আবদুল লতিফ]

শিরোনামঃ সোনা সোনা সোনা লোকে বলে সোনা
কন্ঠ: শাহনাজ রহমাতুল্লাহ

সোনা সোনা সোনা লোকে বলে সোনা
সোনা নয় ততো খাঁটি
বলো যতো খাঁটি তার চেয়ে খাঁটি
বাংলাদেশের মাটি রে
আমার বাংলাদেশের মাটি
আমার জন্মভূমির মাটি

জন-ধন বলো, যতো ধন দুনিয়াতে
হয় কি তুলনা বাংলার কারও সাথে
কতো মা’র ধন মানিক-রতন
কতো জ্ঞানী-গুণী কতো মহাজন
এনেছে আলোর সূর্য এখানে আঁধারের পথ কাটি রে
আমার বাংলাদেশের মাটি
আমার জন্মভূমির মাটি

এই মাটি তলে ঘুমাইছে অবিরাম
রফিক-শফিক-বরকত কতো নাম
কতো তিতুমির কতো ঈশা খান
দিয়েছে জীবন দেয়নি কো মান
রক্তশয্যা পাতিয়া এখানে ঘুমাইছে পরিপাটি রে
আমার বাংলাদেশের মাটি
আমার জন্মভূমির মাটি।

 

আমি বাংলায় গান গাই [ গীতিকার ও সুরকার : প্রতুল মুখোপাধ্যায় ]

আমি বাংলায় গান গাই
আমি বাংলার গান গাই
আমি আমার আমিকে চিরদিন এই বাংলায় খুঁজে পাই

আমি বাংলায় গান গাই
আমি বাংলার গান গাই
আমি আমার আমিকে চিরদিন এই বাংলায় খুঁজে পাই

আমি বাংলায় দেখি স্বপ্ন
আমি বাংলায় বাঁধি সুর
আমি এই বাংলার মায়াভরা পথে হেঁটেছি এতটা দূর

বাংলা আমার জীবনানন্দ
বাংলা প্রাণের সুখ
আমি একবার দেখি, বার বার দেখি, দেখি বাংলার মুখ

বাংলা আমার জীবনানন্দ
বাংলা প্রাণের সুখ
আমি একবার দেখি, বার বার দেখি, দেখি বাংলার মুখ

আমি বাংলায় কথা কই
আমি বাংলার কথা কই
আমি বাংলায় ভাসি, বাংলায় হাসি, বাংলায় জেগে রই

আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে
করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার

বাংলা আমার দৃপ্ত স্লোগান
ক্ষিপ্ত তীর ধনুক
আমি একবার দেখি, বার বার দেখি, দেখি বাংলার মুখ

বাংলা আমার দৃপ্ত স্লোগান
ক্ষিপ্ত তীর ধনুক
আমি একবার দেখি, বার বার দেখি, দেখি বাংলার মুখ

আমি বাংলায় ভালোবাসি
আমি বাংলাকে ভালোবাসি
আমি তারি হাত ধরে সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে আসি

আমি যা কিছু মহান বরণ করেছি
বিনম্র শ্রদ্ধায়
মেশে তেরো নদী সাত সাগরের জল গঙ্গায় পদ্মায়

বাংলা আমার তৃষ্ণার জল
তৃপ্ত শেষ চুমুক
আমি একবার দেখি, বার বার দেখি, দেখি বাংলার মুখ

বাংলা আমার তৃষ্ণার জল
তৃপ্ত শেষ চুমুক
আমি একবার দেখি, বার বার দেখি, দেখি বাংলার মুখ

আমি বাংলায় গান গাই
আমি বাংলার গান গাই
আমি আমার আমিকে চিরদিন এই বাংলায় খুঁজে পাই

আমি বাংলায় দেখি স্বপ্ন
আমি বাংলায় বাঁধি সুর
আমি এই বাংলার মায়াভরা পথে হেঁটেছি এতটা দূর

বাংলা আমার জীবনানন্দ
বাংলা প্রাণের সুখ
আমি একবার দেখি, বার বার দেখি, দেখি বাংলার মুখ
আমি একবার দেখি, বার বার দেখি, দেখি বাংলার মুখ

 

এই পদ্মা, এই মেঘনা [ গীতিকার ও সুরকার : আবু জাফর ]

এই পদ্মা, এই মেঘনা,
এই যমুনা সুরমা নদী তটে
আমার রাখাল মন, গান গেয়ে যায়
আমার রাখাল মন, গান গেয়ে যায়
এই আমার দেশ, এই আমার প্রেম
আনন্দ বেদনায়, মিলন বিরহ সংকটে।
কতো আনন্দ বেদনায়, মিলন বিরহ সংকটে।

এই মধুমতি ধানসিঁড়ি নদীর তীরে
নিজেকে হারিয়ে যেন পাই ফিরে ফিরে
এই মধুমতি ধানসিঁড়ি নদীর তীরে
নিজেকে হারিয়ে যেন পাই ফিরে ফিরে
এক নীল ঢেউ কবিতার প্রচ্ছদ পটে
আনন্দ বেদনায়, মিলন বিরহ সংকটে।
কতো আনন্দ বেদনায়, মিলন বিরহ সংকটে।

এই পদ্মা, এই মেঘনা,
এই হাজারো নদীর অববাহিকায়
এখানে রমণীগুলো নদীর মতন
নদী ও রমণীগুলো শুধু কথা কয়

এই অবারিত সবুজের প্রান্ত ছুঁয়ে
নির্ভয় নীলাকাশ রয়েছে নুয়ে
এই অবারিত সবুজের প্রান্ত ছুঁয়ে
নির্ভয় নীলাকাশ রয়েছে নুয়ে
যেন হৃদয়ের ভালোবাসা হৃদয়ে ফুটে
আনন্দ বেদনায়, মিলন বিরহ সংকটে।
কতো আনন্দ বেদনায়, মিলন বিরহ সংকটে।

এই পদ্মা, এই মেঘনা,
এই যমুনা সুরমা নদী তটে
আমার রাখাল মন, গান গেয়ে যায়
আমার রাখাল মন, গান গেয়ে যায়
এই আমার দেশ, এই আমার প্রেম
আনন্দ বেদনায়, মিলন বিরহ সংকটে।
কতো আনন্দ বেদনায়, মিলন বিরহ সংকটে।

 

যদি রাত পোহালে শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই [ গীতিকার ও সুরকার : হাসান মতিউর রহমান ]

কন্ঠঃ সাবিনা ইয়াসমিন

যদি রাত পোহালে শোনা যেত,
বঙ্গবন্ধু মরে নাই।
যদি রাজপথে আবার মিছিল হতো,
বঙ্গবন্ধুর মুক্তি চাই।
তবে বিশ্ব পেত এক মহান নেতা,
আমরা পেতাম ফিরে জাতির পিতা।

যে মানুষ ভীরু কাপুরুষের মতো,
করেনি কো কখনো মাথা নত।
এনেছিল হায়েনার ছোবল থেকে
আমাদের প্রিয় স্বাধীনতা।

কে আছে বাঙ্গালি তার সমতুল্য,
ইতিহাস একদিন দেবে তার মুল্য।
সত্যকে মিথ্যার আড়াল করে,
যায় কি রাখা কখনো তা।

যদি রাত পোহালে শোনা যেত,
বঙ্গবন্ধু মরে নাই।
যদি রাজপথে আবার মিছিল হতো,
বঙ্গবন্ধুর মুক্তি চাই।
তবে বিশ্ব পেত এক মহান নেতা,
আমরা পেতাম ফিরে জাতির পিতা।

 

ধনধান্যে পুষ্পে ভরা [ গীতিকার ও সুরকার : দ্বিজেন্দ্রলাল রায় ]

ধনধান্য পুস্প ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা
তাহার মাঝে আছে দেশ এক সকল দেশের সেরা
ও সে স্বপ্ন দিয়ে তৈরি সে দেশ স্মৃতি দিয়ে ঘেরা

এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি
সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি
সে যে আমার জন্মভূমি, সে যে আমার জন্মভূমি

চন্দ্র সূর্য গ্রহতারা, কোথায় এমন উজল ধারা?
কোথায় এমন খেলে তড়িৎ এমন কালো মেঘে?
ও তার পাখির ডাকে ঘুমিয়ে উঠে পাখির ডাকে জেগে

এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি
সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি
সে যে আমার জন্মভূমি, সে যে আমার জন্মভূমি

এত স্নিগ্ধ নদী কাহার, কোথায় এমন ধূম্র পাহাড়?
কোথায় এমন হরিত ক্ষেত্র আকাশ তলে মেশে?
এমন ধানের উপর ঢেউ খেলে যায় বাতাস কাহার দেশে?

এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি
সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি
সে যে আমার জন্মভূমি, সে যে আমার জন্মভূমি

পুস্পে পুস্পে ভরা শাখি কুঞ্জে কুঞ্জে গাহে পাখি
গুঞ্জরিয়া আসে অলি পুঞ্জে পুঞ্জে ধেয়ে
তারা ফুলের ওপর ঘুমিয়ে পড়ে ফুলের মধু খেয়ে

এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি
সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি
সে যে আমার জন্মভূমি, সে যে আমার জন্মভূমি

ভায়ের মায়ের এতো স্নেহ কোথায় গেলে পাবে কেহ
ও মা তোমার চরণ দুটি বক্ষে আমার ধরি
আমার এই দেশেতে জন্ম যেন এই দেশেতে মরি

এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি
সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি
সে যে আমার জন্মভূমি, সে যে আমার জন্মভূমি

 

সালাম সালাম হাজার সালাম [ গীতিকার : ফজলে খোদা, সুরকার : আবদুল জব্বার ]

সালাম সালাম হাজার সালাম
সকল শহীদ স্মরণে,
আমার হৃদয় রেখে যেতে চাই
তাদের স্মৃতির চরণে।

সালাম সালাম হাজার সালাম

মায়ের ভাষায় কথা বলাতে
স্বাধীন আশায় পথ চলাতে
হাসিমুখে যারা দিয়ে গেল প্রাণ
সেই স্মৃতি নিয়ে গেয়ে যাই গান
তাদের বিজয় মরণে
আমার হৃদয় রেখে যেতে চাই
তাদের স্মৃতির চরণে।

সালাম সালাম হাজার সালাম

ভাইয়ের বুকের রক্তে আজিকে
রক্ত মশাল জ্বলে দিকে দিকে
সংগ্রামী আজ মহাজনতা
কন্ঠে তাদের নব বারতা
শহীদ ভাইয়ের স্মরণে
আমার হৃদয় রেখে যেতে চাই
তাদের স্মৃতির চরণে।

সালাম সালাম হাজার সালাম

বাংলাদেশের লাখো বাঙালি
জয়ের নেশায় দিলো রক্ত ঢালি
আলোর দেয়ালি ঘরে ঘরে জ্বালি
ঘুঁচি এ মনের আঁধার কালি।
সকল শহীদ স্মরণে
আমার হৃদয় রেখে যেতে চাই
তাদের স্মৃতির চরণে।

সালাম সালাম হাজার সালাম
সকল শহীদ স্মরণে
আমার হৃদয় রেখে যেতে চাই
তাদের স্মৃতির চরণে।

সালাম সালাম হাজার সালাম।

 

কারার ঐ লৌহকপাট [ গীতিকার ও সুরকার : কাজী নজরুল ইসলাম]

কারার ঐ লৌহকপাট
ভেঙ্গে ফেল কর রে লোপাট,
রক্ত-জমাট শিকল পূজার পাষাণ-বেদী।

ওরে ও তরুণ ঈশান
বাজা তোর প্রলয় বিষাণ,
ধ্বংস নিশান উড়ুক প্রাচীর প্রাচীর ভেদি।
কারার ঐ লৌহকপাট
ভেঙ্গে ফেল কর রে লোপাট,
রক্ত জমাট শিকল পূজার পাষাণ বেদী।

গাজনের বাজনা বাজা
কে মালিক, কে সে রাজা,
গাজনের বাজনা বাজা
কে মালিক, কে সে রাজা,
কে দেয় সাজা মুক্ত স্বাধীন সত্য কে রে?
হা হা হা পায় যে হাসি,
ভগবান পরবে ফাঁসি,
সর্বনাশী শিখায় এ হীন তথ্য কে রে।
কারার ঐ লৌহকপাট
ভেঙ্গে ফেল কর রে লোপাট,
রক্ত জমাট শিকল পুজার পাষাণ বেদী।

ওরে ও পাগলা ভোলা
দে রে দে প্রলয় দোলা,
ওরে ও পাগলা ভোলা
দে রে দে প্রলয় দোলা,
গারদগুলা জোরসে ধরে হ্যাচকা টানে,
গারদগুলা জোরসে ধরে হ্যাচকা টানে
মার হাঁক হায়দারী হাঁক,
কাঁধে নে দুন্দুভি ঢাক
ডাক ওরে ডাক মৃত্যুকে ডাক জীবন পানে।
কারার ঐ লৌহকপাট
ভেঙে ফেল কর রে লোপাট,
রক্ত জমাট শিকল পূজার পাষাণ বেদী।

নাচে ওই কালবোশাখী
কাটাবী কাল বসে কি?
নাচে ওই কালবোশাখী
কাটাবী কাল বসে কি?
দেরে দেখি ভীম কারার ঐ ভিত্তি নাড়ি,
দেরে দেখি ভীম কারার ঐ ভিত্তি নাড়ি
লাথি মার ভাঙ্গরে তালা,
যত সব বন্দী শালায়
আগুন-জ্বালা, আগুন জ্বালা,
ফেল উপাড়ি।

কারার ঐ লৌহ কপাট
ভেঙ্গে ফেল কর রে লোপাট,
রক্ত জমাট শিকল পূজার পাষাণ বেদী।

 

ভয় কী মরণে রাখিতে সন্তানে [ গীতিকার ও সুরকার : মুকুন্দ দাস ]

ভয় কি মরণে রাখিতে সন্তানে
মাতঙ্গী মেতেছে আজ সমর রঙ্গে
তা থৈ তা থৈ থৈ দিমি দিমি দ্রম দ্রম
ভূত পিশাচ নাচে যোগিনী সঙ্গে
দানব দলনী হয় উন্মাদিনী
আর কি দানব থাকিবে বঙ্গে
সাজ রে সন্তান হিন্দু-মুসলমান
থাকে থাকিবে প্রাণ, না হয় যাইবে প্রাণ
নিতে হয় মুকুন্দেরে নিও রে সঙ্গে।।

 

যে মাটির বুকে ঘুমিয়ে আছে লক্ষ মুক্তি সেনা [ গীতিকার : নাসিম খান, সুরকার : সেলিম আশরাফ ]

যে মাটির বুকে ঘুমিয়ে আছে
লক্ষ মুক্তি সেনা
দে না তোরা দে না
সে মাটি আমার
অঙ্গে মাখিয়ে দে না ।।

রোজ এখানে সূর্য ওঠে
আশার আলো নিয়ে
হৃদয় আমার ধন্য যে হয়
আলোর পরশ পেয়ে ।।
সে মাটি ছেড়ে অন্য কোথাও
যেতে বলিস না
দে না তোরা দে না
সে মাটি আমার
অঙ্গে মাখিয়ে দে না। (ঐ)

রক্তে যাদের জেগেছিল
স্বাধীনতার নিশা
জীবন দিয়ে রেখে গেছে
মুক্ত পথের দিশা
সে পথ ছেড়ে ভিন্ন পথে
যেতে বলিস না
দে না তোরা দে না
সে মাটি আমার
অঙ্গে মাখিয়ে দে না। (ঐ)

 

সব কটা জানালা খুলে দাও না [ গীতিকার : নজরুল ইসলাম বাবু, সুরকার : আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল ]

সবক’টা জানালা খুলে দাওনা
আমি গাইব গাইব বিজয়েরই গান
ওরা আসবেই….চুপি চুপি
যারা এ দেশটাকে ভালবেসে দিয়ে গেছে প্রাণ।

সবক’টা জানালা খুলে দাওনা

সবক’টা জানালা খুলে দাওনা
আমি গাইব গাইব বিজয়েরই গান
ওরা আসবেই….চুপি চুপি
যারা এ দেশটাকে ভালবেসে দিয়ে গেছে প্রাণ।

সবক’টা জানালা খুলে দাওনা…

চোখ থেকে মুছে ফেল অশ্রুটুকু
এমন খুশীর দিনে কাঁদতে নেই
চোখ থেকে মুছে ফেল অশ্রুটুকু
এমন খুশীর দিনে কাঁদতে নেই।
হারানো স্মৃতির বেদনাতে
একাকার করে মন রাখতে নেই
ওরা আসবেই…চুপি চুপি
কেউ যেন ভুল করে গেওনাকো
মন ভাঙ্গা গান।

সবক’টা জানালা খুলে দাওনা…

আজ আমি সারা নিশি থাকব জেগে
ঘরের আলো সব আঁধার করে
আজ আমি সারা নিশি থাকব জেগে
ঘরের আলো সব আঁধার করে।
ছড়িয়ে রাখো, আতর গোলাপ
এদেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে
ওরা আসবেই…চুপি চুপি
কেউ যেন ভুল করে গেওনাকো
মন ভাঙ্গা গান।

সবক’টা জানালা খুলে দাওনা
আমি গাইব গাইব বিজয়েরই গান
ওরা আসবেই…চুপি চুপি
যারা এ দেশটাকে ভালবেসে দিয়ে গেছে প্রাণ
সবক’টা জানালা খুলে দাওনা…

 

সুন্দর সুবর্ণ তারুণ্য লাবণ্য [ গীতিকার ও সুরকার : আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল ]

সুন্দর, সুবর্ণ, তারুন্য, লাবন্য
অপূর্ব রূপসী রূপেতে অনন্য
আমার দু’চোখ ভরা স্বপ্ন
ও দেশ, তোমারই জন্য।।

থাকবে নাকো দুঃখ দারিদ্র
বিভেদ-বেদনা-ক্রন্দন
প্রতিটি ঘরে একই প্রশান্তি
একই সুখের স্পন্দন।।

আমার দু’চোখ ভরা স্বপ্ন
ও দেশ, তোমারই জন্য।।

তোমার জন্য হবো দুরন্ত
তোমার জন্য শান্ত
প্রহরী হয়ে দেব পাহারা
যেথায় তোমার সীমান্ত।।

আমার দু’চোখ ভরা স্বপ্ন
ও দেশ, তোমারই জন্য।।

সুন্দর, সুবর্ণ, তারুন্য, লাবন্য
অপূর্ব রূপসী রূপেতে অনন্য
আমার দু’চোখ ভরা স্বপ্ন
ও দেশ, তোমারই জন্য।।

 

সূর্যোদয়ে তুমি, সূর্যাস্তেও তুমি [ গীতিকার : মনিরুজ্জামান মনির, সুরকার : আলাউদ্দিন আলি ]

সূর্যদয়ে তুমি, সূর্যাস্তেও তুমি
ও আমার বাংলাদেশ, প্রিয় জন্মভূমি।।

জলসিঁড়ি নদীর তীরে,
তোর খুশির কাঁকন যেন বাজে
ও—কাশবনে ফুলে ফুলে,
তোর মধুর বাসর যেন সাজে
তোর একতারা হায়,
করে বাউল আমায় সুরে সুরে।।

আঁকাবাঁকা মেঠো পথে
তোর রাখাল হৃদয় যেন হাসে
ও—পদ্ম পাতা, দীঘির ঝিলে
তোর সোনার স্বপন যেন ভাসে
তোর এই আঙিনায়
ধরে রাখিস আমায় চিরতরে।।

 

প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ [ গীতিকার : মনিরুজ্জামান মনির, সুরকার : আলাউদ্দিন আলি ]

প্রথম বাংলাদেশ, আমার শেষ বাংলাদেশ,
জীবন বাংলাদেশ আমার মরণ বাংলাদেশ,
বাংলাদেশ, বাংলাদেশ, বাংলাদেশ।।

আমার আঙিনায় ছড়ানো বিছানো,
সোনা সোনা ধুলিকণা,
মাটির মমতায় ঘাস ফসলে,
সবুজের আল্পনা,
আমার তাতেই হয়েছে
স্বপ্নের বীজবোনা।।
অরূপ জোছনায়, সাজানো রাঙানো
ঝিলিমিলি চাঁদ তলে
নিবিড় মমরায়, পিউ পাপিয়া
হৃদয়ের দ্বার খোলে,
আমি তাতেই রেখেছি
স্বপ্নের দ্বীপ জ্বেলে।।

 

একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার [ গীতিকার : নইম গহর, সুরকার : অজিত রায় ]

একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার
সারা বিশ্বের বিস্ময় তুমি আমার অহংকার।

তোমার স্বাধীনতা গৌরব সৌরভে
এনেছে আমার প্রানের সূর্যে রৌদ্রেরও সজীবতা
দিয়েছে সোনালী সুখী জীবনের দৃপ্ত অঙ্গীকার।

সারা বিশ্বের বিস্ময় তুমি আমার অহংকার।

তোমার ছায়া ঢাকা রৌদ্রেরেরও প্রান্তরে
রেখেছি অতল অমর বর্নে মুক্তির স্নেহ মাখা
জেনেছি তুমি জীবন মরণে বিমুগ্ধ চেতনার।

সারা বিশ্বের বিস্ময় তুমি আমার অহংকার।

 

শোনো একটি মুজিবরের থেকে [গীতিকার : গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার, সুরকার : অংশুমান রায় ]

শোনো, একটি মুজিবরের থেকে
লক্ষ মুজিবরের কন্ঠস্বরের ধ্বনি, প্রতিধ্বনি
আকাশে বাতাসে ওঠে রণি।
বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ।।

সেই সবুজের বুক চেরা মেঠো পথে,
আবার এসে ফিরে যাবো আমার
হারানো বাংলাকে আবার তো ফিরে পাবো।
শিল্পে কাব্যে কোথায় আছে হায় রে
এমন সোনার দেশ।

শোনো, একটি মুজিবরের থেকে
লক্ষ মুজিবরের কন্ঠস্বরের ধ্বনি, প্রতিধ্বনি
আকাশে বাতাসে ওঠে রণি।
বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ।।

বিশ্বকবির সোনার বাংলা, নজরুলের বাংলাদেশ,
জীবনানন্দের রূপসী বাংলা
রূপের যে তার নেইকো শেষ, বাংলাদেশ।.

‘জয় বাংলা’ বলতে মনরে আমার এখনো কেন ভাবো,
আমার হারানো বাংলাকে আবার তো ফিরে পাবো,
অন্ধকারে পুবাকাশে উঠবে আবার দিনমণি।।

 

জনতার সংগ্রাম চলবেই [ গীতিকার : সিকান্দার আবু জাফর, সুরকার : শেখ লুতফর রহমান ]

শিরোনামঃ জনতার সংগ্রাম চলবেই
গীতিকারঃ সিকান্দার আবু জাফর
সুরকারঃ শেখ লুৎফর রহমান

জনতার সংগ্রাম চলবেই
আমাদের সংগ্রাম চলবেই
জনতার সংগ্রাম চলবেই।।

হত মানে অপমানে নয়, সুখ-সম্মানে
বাঁচবার অধিকার কাড়তে
দাস্যের নির্মোক ছাড়তে
অগিণিত মানুষের প্রাণপণ যুদ্ধ
চলবেই চলবেই,
জনতার সংগ্রাম চলবেই।।

প্রতারণা প্রলোভন প্রলেপে
হোক না আঁধার নিশ্চিদ্র
আমরা তো সময়ের সারথী
নিশিদিন কাটাবো বিনিদ্র।

দিয়েছি তো শান্তি আরও দেবো স্বস্তি
দিয়েছি তো সম্ভ্রম আরো দেবো অস্থি
প্রয়োজন হলে দেবো এক নদী রক্ত।

হোক না পথের বাধা প্রস্তর শক্ত
অবিরাম যাত্রার চির সংঘর্ষে
একদিন সে পাহাড় টলবেই
চলবেই চলবেই
জনতার সংগ্রাম চলবেই
আমাদের সংগ্রাম চলবেই।।

হতে পারি পথভ্রম আরও বিধ্বস্ত
ধিকৃত নয় তবু চিত্ত
আমরা তো সুস্থির লক্ষ্যের যাত্রী
চলবার আবেগেই তৃপ্ত।

আমাদের পথরেখা দুস্তর দুর্গম
সাথে তবু অগণিত সঙ্গী
বেদনার কোটি কোটি অংশী
আমাদের চোখে চোখে লেলিহান অগ্নি
সকল বিরোধ বিধ্বংসী।

এই কালো রাত্রির সুকঠিন অর্গল
কোনদিন আমরা যে ভাঙবই
মুক্ত প্রাণের সাড়া আনবই।
আমাদের শপথের প্রদীপ্ত স্বাক্ষরে
নুতন সূর্যশিখা জ্বলবেই।

জনতার সংগ্রাম চলবেই
আমাদের সংগ্রাম চলবেই।

 

রক্ত দিয়ে নাম লিখেছি [ গীতিকার : আবুল কাশেম সন্দ্বীপ, সুরকার : সুজেয় শ্যাম ]

রক্ত দিয়ে নাম লিখেছি
বাংলাদেশের নাম
মুক্তি ছাড়া তুচ্ছ মোদের
এই জীবনের দাম।।

সংকটে আর সংঘাতে,
আমরা চলি সব একসাথে,
জীবন মরণ করে সব
লড়ছি অবিরাম।।

রক্ত যখন দিয়েছি আরও রক্ত দেব,
রক্তের প্রতিশোধ মোরা নেবই নেব,
ঘরে ঘরে আজ দূর্গ গড়েছি
বাংলার সন্তান,
সইবনা মোরা, সইবনা আর
জীবনের অপমান।।

জীবন জয়ের গৌরবে,
নতুন দিনের সৌরভে
মুক্ত স্বাধীন জীবন গড়া
মোদের মনস্কাম।

 

সোনায় মোড়ানো বাংলা মোদের শ্মশান করেছে কে? [ গীতিকার ও সুরকার : মকসেদ আলি খান সাঁই]

সোনায় মোড়ানো বাংলা মোদের
শ্মশান করেছে কে,
এহিয়া তোমায় আসামীর মত
জবাব দিতেই হবে।।

শ্যামল বরণ সোনালী ফসলে
ছিল যে সেদিন ভরা
নদী নির্ঝরে সদা বয়ে যেত
পূত অমৃত ধারা
অগ্নিদহনে সে সুখ স্বপ্ন
দগ্ধ করেছে কে।।

আমরা চেয়েছি ক্ষুধার অন্ন
একটি স্নেহের নীড়
নগদ পাওনা হিসেব কষিয়া
ছিলনা লোভের ভিড়।

দেশের মাটিতে আমরা ফলাব
ফসলের কাঁচা সোনা
চিরদিন তুমি নিয়ে যাবে কেড়ে
হায় রে উন্মাদনা
এই বাঙালীর বুকের রক্তে
বন্যা বহালো কে।।

 

বাংলার হিন্দু, বাংলার বৌদ্ধ [ গীতিকার : গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার, সুরকার : শ্যামল মিত্র ]

বাংলার হিন্দু, বাংলার বৌদ্ধ,
বাংলার খ্রীষ্টান, বাংলার মুসলমান,
আমরা সবাই বাঙালী ।।

তিতুমীর, ঈসা খাঁ, সিরাজ
সন্তান এই বাংলাদেশের।
ক্ষুদিরাম, সূর্যসেন, নেতাজী
সন্তান এই বাংলাদেশের।
এই বাংলার কথা বলতে গিয়ে
বিশ্বটাকে কাঁপিয়ে দিল কার সে কন্ঠস্বর,
মুজিবর, সে যে মুজিবর,
‘জয় বাংলা’ বল রে ভাই।।

ছয়টি ছেলে বাংলাভাষার চরণে দিল প্রাণ,
তাঁরা বলে গেল ভাষাই ধর্ম,
ভাষাই মোদের মান।
মাইকেল, বিশ্বকবি, নজরুল
সন্তান এই বাংলাদেশের।
কায়কোবাদ, বিবেকানন্দ, অরবিন্দ
সন্তান এই বাংলাদেশের।
এই বাংলার কথা বলতে গিয়ে
বিশ্বটাকে কাঁপিয়ে দিল কার সে কন্ঠস্বর,
মুজিবর, সে যে মুজিবর,
‘জয় বাংলা’ বল রে ভাই।।

 

বিচারপতি তোমার বিচার করবে যারা [ গীতিকার ও সুরকার : সলিল চৌধুরী ]

বিচারপতি তোমার বিচার করবে যারা
আজ জেগেছে এই জনতা, এই জনতা।।
তোমার গুলির, তোমার ফাঁসির,
তোমার কারাগারের পেষণ শুধবে তারা
ও জনতা এই জনতা এই জনতা।।

তোমার সভায় আমীর যারা,
ফাঁসির কাঠে ঝুলবে তারা।।
তোমার রাজা মহারাজা,
করজোরে মাগবে বিচার।।
ঠিক যেন তা এই জনতা।

তারা নতুন প্রাতে প্রাণ পেয়েছে, প্রাণ পেয়েছে।
তারা ক্ষুদিরামের রক্তে ভিজে প্রাণ পেয়েছে।।
তারা জালিয়ানের রক্তস্নানে প্রাণ পেয়েছে।।
তারা ফাঁসির কাঠে জীবন দিয়ে
প্রাণ পেয়েছে, প্রাণ পেয়েছে।।
গুলির ঘায়ে কলজে ছিঁড়ে প্রাণ পেয়েছে,
প্রাণ পেয়েছে এই জনতা।

নিঃস্ব যারা সর্বহারা তোমার বিচারে।
সেই নিপীড়িত জনগণের পায়ের ধারে।।
ক্ষমা তোমায় চাইতে হবে
নামিয়ে মাথা হে বিধাতা।।

রক্ত দিয়ে শুধতে হবে।
নামিয়ে মাথা হে বিধাতা।।
ঠিক যেন তা এই জনতা।
বিচারপতি তোমার বিচার করবে যারা
আজ জেগেছে এই জনতা, এই জনতা।।

 

ও মাঝি নাও ছাইড়া দে [ গীতিকার : এসএম হেদায়েত, সুরকার : আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল ]

মাঝি নাও ছাইরা দে
ও মাঝি পাল উড়াইয়া দে
গা-রে মাঝি গা কোন গান।।

একদিন তোর নাও মাঝি
ভাসবে না রে নীল নদীতে রে
সেদিন তোর গান মাঝি
শুনবে না কেউ গাইবে না বলে-
ও মাঝি রে, ও কলের নৌকা কাইরা নিবে সুর।।

যন্ত্রের নাও ধোঁয়া ছাইরা
আঁধার করল নীল আকাশটারে, ও মাঝি রে-
সেদিন তোর নাও মাঝি
শূণ্য হয়ে থাকবে রে পরে-
ও মাঝি রে-
ও চল রে মাঝি যাইরে বহু দূর।।

 

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি [ গীতিকার : আবদুল গাফফার চৌধুরী, সুরকার : আলতাফ মাহমুদ ]

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী
আমি কি ভুলিতে পারি।

ছেলেহারা শত মায়ের অশ্রু গড়ায়ে ফেব্রুয়ারী
আমি কি ভুলিতে পারি।

আমার সোনার দেশের রক্তে জাগালো ফেব্রুয়ারী
আমি কি ভুলিতে পারি।
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী
আমি কি ভুলিতে পারি।

জাগো নাগিনীরা জাগো নাগিনীরা জাগো কালবোশেখীরা
শিশু হত্যার বিক্ষোভে আজ কাঁপুক বসুন্ধরা,
দেশের সোনার ছেলে খুন করে রোখে মানুষের দাবী
দিন বদলের ক্রান্তিলগ্নে তবু তোরা পার পাবি?

না, না, না, না খুন রাঙা ইতিহাসে শেষ রায় দেওয়া তারই
একুশে ফেব্রুয়ারি একুশে ফেব্রুয়ারি।।
সেদিনও এমনি নীল গগনের বসনে শীতের শেষে
রাত জাগা চাঁদ চুমো খেয়েছিল হেসে;
পথে পথে ফোটে রজনীগন্ধা অলকনন্দা যেন,
এমন সময় ঝড় এলো এক ঝড় এলো খ্যাপা বুনো।।

সেই আঁধারের পশুদের মুখ চেনা,
তাহাদের তরে মায়ের, বোনের, ভায়ের চরম ঘৃণা
ওরা গুলি ছোঁড়ে এদেশের প্রাণে দেশের দাবীকে রোখে
ওদের ঘৃণ্য পদাঘাত এই সারা বাংলার বুকে
ওরা এদেশের নয়,
দেশের ভাগ্য ওরা করে বিক্রয়
ওরা মানুষের অন্ন, বস্ত্র, শান্তি নিয়েছে কাড়ি
একুশে ফেব্রুয়ারি একুশে ফেব্রুয়ারি।।

তুমি আজ জাগো তুমি আজ জাগো একুশে ফেব্রুয়ারি
আজো জালিমের কারাগারে মরে বীর ছেলে বীর নারী
আমার শহীদ ভায়ের আত্মা ডাকে
জাগো মানুষের সুপ্ত শক্তি হাটে মাঠে ঘাটে বাটে
দারুণ ক্রোধের আগুনে আবার জ্বালবো ফেব্রুয়ারি
একুশে ফেব্রুয়ারি একুশে ফেব্রুয়ারি।।

 

মা গো, ভাবনা কেন? [ গীতিকার : গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার, সুরকার : সমর দাস ]

মা গো ভাবনা কেন?
আমরা তোমার শান্তি প্রিয় শান্ত ছেলে
তবু শত্রু এলে অস্ত্র হাতে ধরতে জানি
তোমার ভয় নেই মা
আমরা প্রতিবাদ করতে জানি

আমরা হারবো না হারবো না
তোমার মাটির একটি কণাও ছাড়বো না
আমরা পাঁজর দিয়ে দুর্গঘাঁটি গড়তে জানি
তোমার ভয় নেই মা
আমরা প্রতিবাদ করতে জানি

আমরা পরাজয় মানবো না
দুর্বলতায় বাঁচতে শুধু জানবো না
আমরা চিরদিনই হাসিমুখে মরতে জানি
তোমার ভয় নেই মা
আমরা প্রতিবাদ করতে জানি

আমরা অপমান সইবো না
ভীরুর মত ঘরের কোনে রইবো না
আমরা আকাশ থেকে বজ্র হয়ে ঝরতে জানি
তোমার ভয় নেই মা
আমরা প্রতিবাদ করতে জানি।

এছাড়া আরও প্রচুর দেশের গান রয়েছে। যারা আমাদের সবার জন্য এই সৃষ্টিগুলো করে গেছেন, তাদের মনে রাখা আমাদের কর্তব্য।

 

আরও পড়ুন:

Leave a Comment