বাংলাদেশের ভাড়াটে ধর্মজীবীদের আসল টার্গেট কি? [ ইসলাম ও মুসলিম ]

বাংলাদেশের ভাড়াটে ধর্মজীবীদের আসল টার্গেট কি?
মুসলিম নির্যাতন এবং হত্যা-করিদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ /প্রতিরোধ?
নাকি সম্পূর্ণ ভাড়াটিয়া রাজনৈতিক গুণ্ডামি?

ইসলাম ও মুসলিম কি বাংলাদেশের ভাড়াটে ধর্মজিবীরা আদৌ চিন্তিত?

মুসলিম নির্যাতন, হত্যা যদি তাদের বিন্দুমাত্র মাথাব্যথার কারণ হতো, তাহলে তো তাদের আরও অনেক ক্ষেত্রে, অনেক বেশি প্রতিবাদী হবার কথা ছিল।

ইসলাম ও মুসলিম : বাঙ্গালী, বালুচ, সিদ্ধি সহ, পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি মুসলিম হত্যাকারী দেশের নাম পাকিস্তান। সেই হত্যা আজও চলমান, প্রতিদিন চলছে। কদিন আগেও হেলিকপ্টার থেকে ফেলে দিয়ে তরতাজা বালুচ তরুণকে হত্যা করেছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। কোয়েটা, কালাত, খুজদার, মাকরানে হাজার হাজার বালুচের গণকবর আবিষ্কার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। সেই হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে কোনদিন এদের প্রতিবাদ করতে দেখেছেন? চলমান সেই হত্যাকাণ্ড ঠেকাতে তাদের কোন উদ্যোগ দেখেছেন? দেখবেন না। কারণ ইসলাম এদের কাছে কিছুই নয়, দেনা পাওনার হিসেবটা মূল।

ভাড়াটে ধর্মজীবীদের আসল টার্গেট কি? হেফাজত এ ইসলাম | Hefazot E Islam

বর্তমান পৃথিবীতে চীনের উইঘুর একমাত্র জায়গা, যেখানে সত্যিকার অর্থে কারবালা চলছে। এমন একটি পরিস্থিতি যেখানে ইসলামের দৃষ্টিতে সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র জেহাদ ফরজ। কারণ একমাত্র ওখানেই মুসলিমদের ধর্ম বিশ্বাসের জন্য সরকারি ভাবে নির্যাতিত হতে হচ্ছে। একমাত্র ওখানেই মুসলিমদের একান্ত ব্যক্তিগত পর্যায়ে ধর্ম পালনে সরকারি ভাবে বাধা ও অত্যাচার করা হচ্ছে। বর্তমান পৃথিবীর মুসলিম সংখ্যালঘু কোন দেশে এরকম নজির নেই। অথচ এসব নিয়ে একবারও এইসব ধর্মজিবীদের টু শব্দটি করতে দেখেছেন? দেখেন নি। কারণ সেখানেও ইসলাম নয়, হিসেবের পোটলাটা মূল।

শুধু এগুলোই নয়, আলকায়েদা, আইএসআইএস, বোকো হারাম নিয়ে তাদের কখনো সরব অবস্থান দেখবেন না। এসব জঙ্গি নেতাদের অমুসলিম ঘোষণা করতে দেখবেন না। সেই রিস্কই নেবে না, পাছে ভাসুরের নাম বেরিয়ে আসে।

এসব ভয়ানক ইসলাম বিরোধী, মুসলিম বিরোধী নিপীড়ন, গণহত্যাকে সুবিধা-মত না দেখার ভান করে। তাদের নজর শুধুমাত্র গিয়ে আটকে যায় গুজরাটের রায়টে। একথা বলাই বাহুল্য যে অন্য সবগুলো ঘটনার কাছে গুজরাট একেবারেই ক্ষুদ্র। তার অর্থ মেটেই এমন নয় যে গুজরাটে যা হয়েছে তার এড়িয়ে যেতে হবে। আমার দৃষ্টিতে ছোট-বড় হোক প্রতিটি অন্যায় বিচারের দাবী রাখে। তাছাড়া আমার ব্যক্তিগত রাজনৈতিক আদর্শ নরেন্দ্র মোদীর রাজনৈতিক আদর্শের সম্পূর্ণ বিরোধী। কিন্তু তা বলে এত বড় বড় অন্যায়কে পাশ কাটিয়ে, শুধুমাত্র ছোটটি নিয়ে পড়ে থাকাকে কি যৌক্তিক? সেটা কি কোন মুমিন এর দৃষ্টিভঙ্গি হতে পারে?

 

বাংলাদেশের ভাড়াটে ধর্মজীবীদের আসল টার্গেট কি? [ ইসলাম ও মুসলিম ]

 

বাংলাদেশের ভাড়াটে ধর্মজীবীদের আসল টার্গেট কি?

এবার আসুন দেখি – তাদের এলার্জি কি আসলেই গুজরাট বা মোদী?
এবার হিসেব করে দেখুন, গুজরাট ঘটেছে ২০০২ সালে। এরপর নরেন্দ্র মোদী ২০১৫ সালের জুনে একই সরকারের আমন্ত্রণে বাংলাদেশে এসেছিলেন। সেসময় এই এই প্রতিবাদীরা কেন কোন প্রতিবাদ করেনি? বরং এদের মাতুলরা দেখা করেছেন, সাক্ষাতের উচ্ছ্বাস মিডিয়াকে জানিয়েছেন। তাহলে এবার নতুন করে কি হল? সেই একই মোদী নতুন করে কেন এত খারাপ হয়ে গেলেন? ২০১৫ তে যদি ভালো থাকে ২০২১ এ এসে কি ঘটলো? নতুন করে প্রতিবাদ করার কথা মনে পড়লো? ২০১৫ তে এই সব ধর্মজিবীর নিশ্চয় একসাথে এলাজাইমারস্ এর চিকিৎসা চলছিলো না !

Allama Mamunul Haque, আল্লামা মামুনুল হক

আসলে সেসময় প্রতিবাদ না করার মূল কারণ – গুজরাট, মুসলিম বা ইসলাম নয়। কারণ ছিল সে সময়ের বিএনপি-জামাতের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। বিএনপি-জামাত তখনো আশা করছিলো, নরেন্দ্র মোদী তাদেরকে ক্ষমতায় বসিয়ে দিয়ে যাবে। আপনাদের নিশ্চয় মনে আছে, নরেন্দ্র মোদী জেতার পরে বিএসপি-জামাত অভিনন্দন জানিয়েছিল, সারা দেশে মিষ্টি বিতরণ করেছিলো। তাদের ধারণা ছিল সাম্প্রদায়িক দল ভাই ভাই হবে।

তারা হিন্দু সাম্প্রদায়িক দল বিজেপির সহায়তায় বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসবে। আর আওয়ামীলীগ যেহেতু ধর্মনিরপেক্ষ কংগ্রেসের বন্ধু, তাই তাদেরকে ক্ষমতা থেকে সরাতে নিশ্চিত বিজেপি সহায়তা করবে। বেগম জিয়া সেসময় মোদীর সাথে সাক্ষাতের পরে খুব খুশি ছিলেন। বিএনপি থেকে বলা হয়েছিলো আলাপ খুবই ফলপ্রসূ। আরেক পশলা মিষ্টির বন্যা। এসব কারণে সেসময় মোদী তাদের একান্ত আপন জন ছিলেন। আর বিএনপি-জামাতের মোদীকে ভালবেসেছিল বলে তাদের ভাড়াটে ধর্মজিবীদের সৃতি থেকে গুজরাট বিসৃত হয়ে গিয়েছিল।

হেফাজত এ ইসলাম | Hefazot E Islam

কিন্তু পরবর্তীতে কি দেখা গেছে? বিজেপি সরকার রাজনৈতিক ভাবে বিজয়ী আওয়ামীলীগ সরকারের সাথে সখ্যতা গড়তে সচেষ্ট হয়েছে। তারা দলের চেয়ে, দু দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব ও উন্নয়নকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। বিজেপি রাজি হয়নি বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে। তাই বিএনপি-জামাতের সাম্প্রদায়িক সমীকরণ যখন মেলেনি, তখনই আবার গুজরাট মনে পড়ে গেছে। পৃথিবীর তাবৎ মুসলিমদের অতীত ও বর্তমান সমস্যা বাদ দিয়ে, ২০০২ সালের গুজরাট আজ তাদের কাছে একমাত্র প্রতিবাদ যোগ্য বিষয় বলে মনে হয়েছে।

পুরো ঘটনাচক্র বিশ্লেষণ করলে বুঝতে বাকি থাকে না যে, তাদের কাছে – মোদী, গুজরাট, ইসলাম, মুসলিম কোনটাই আসলে সমস্যা নয়। এসব নিয়ে তাদের সামান্যও মাথা ব্যথা নেই।
তাদের ব্যথা বাংলাদেশ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, বঙ্গবন্ধু ও তার আদর্শ। সেগুলোর সবচেয়ে কাছের দল হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ সরকার, তার দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সবাইকে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে চলা। বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানানোর সব সম্ভাবনা একে একে শেষ হয়ে যাওয়া।

মোনাফেকদের আস্ফালনের ফল কিছু হয় না। কোনদিন হয়নি।
শুধু মন খারাপ একটা জায়গাতেই হয়, এদের কারণে দেশের ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষের কিছু ক্ষতি হয়ে যাবে।
আল্লাহ সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষদের এই এদের হাত ও জিহ্বা থেকে হেফাজত করুন।

লেখার ফেসবুক পাতার লিংক : https://www.facebook.com/SufiFaruqOfficial/posts/4455847314432333

আরও পড়ুন :

ধর্মনিরপেক্ষতা, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ, সেক্যুলারিজম – কি, কেন, কিভাবে?