শ্রোতা সহায়িকা নোট সিরিজে আজকের রাগ – রাগ বসন্ত। এই আর্টিকেলটির উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। আপডেট পেতে আবারো আসার আমন্ত্রণ রইলো।
রাগ বসন্ত
বসন্ত ঋতু-প্রধান রাগ। বসন্ত কালের প্রধান দুটি রাগ- বসন্ত ও বাহার।
এই রাগটি বসন্ত কাল সবসময় গাওয়া/বাজানো যায়। অন্য সময়ে রাত্রির ২য় প্রহর (৯ টা) থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত গাওয়া/বাজানোর জন্য। ধরা হয় এই রাগটির উৎপত্তি শিখ ট্র্যাডিশন থেকে। তাদের রাগমালা অনুযায়ী এই রাগটি রাগ হিন্দোলের পুত্র। শ্রী গুরু গ্রন্থ সাহেব (শিখদের পবিত্র গ্রন্থ) এর ৩১ টি রাগের মধ্যে ২৫তম রাগ এটি।
এই রাগটি বেশি পুরোনো। ৮ম শতক থেকে এর নিয়মিত গান-বাজনার প্রমাণ পাওয়া যায়। বর্তমানে প্রচলিত এই রাগের রিশব কোমল, মধ্যম তীব্র, ধৈবত কোমল। সঙ্গত কারণেই রাগটির জায়গা হয়েছে পুরবী ঠাটে। তবে শ্রী গুরু গ্রন্থ সাহেব অনুযায়ী এই রাগটি বিলাবল ঠাটের। এখন বিলাবল ঠাটের বসন্তটিকে বলা হয় শুদ্ধ-বসন্ত।
উত্তর ভারতীয় সঙ্গীতশাস্ত্রে বর্ণিত পূরবী ঠাটের অন্তর্গত একটি রাগ। এটি একটি গম্ভীর প্রকৃতির রাগ। মধ্য ও তার সপ্তকে এই রাগের বিস্তার ঘটে। তবে মধ্য সপ্তকে ষড়্জ সামান্য ব্যবহৃত হয়। কিন্তু তার সপ্তকে র্স বেশি ব্যবহৃত হয়। আরোহে ঋষভ কম ব্যবহৃত হয়। বসন্ত ঋতুর রাগ হিসাবে, এই রাগ বসন্তকালের (ফাল্গুন-চৈত্র) যে কোনো সময় গাওয়া হয়ে থাকে। অন্য ঋতুতে এই রাগ রাত্রি শেষ প্রহরে পরিবেশনের নির্দেশ রয়েছে। অনেকে একে প্রাতঃকালীন সন্ধিপ্রকাশ রাগ হিসেবে গেয়ে থাকেন। এই রাগের মুখ্য বিষয় বসন্ত ঋতু, রসের বিচারে শৃঙ্গার। অনেক সময় বীর রসের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।
এই রাগে শ্রী’র প্রভাব রয়েছে। বিশেষ করে শ্রী রাগের ন্ ঋ স এর র্ঋ ন দ প সুরশৈলী এই রাগে প্রয়োগ করা হয়। তবে এই রাগ ঋষভের ব্যবহার শ্রী’র রাগের মতো দীর্ঘ নয়।
প্রাচীনকালে এই রাগকে পুংলিঙ্গের বিচারে রাগ বলা হতো। স্ত্রীলিঙ্গের বিচারে কেউ কেউ এই রাগকে বাসনী বা বসন্তী নামে অভিহিত করেছেন। বর্তমানে এই রাগকে কেউ কেউ মারবা ঠাটের অন্তর্গত রাগ হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন। পূর্বী ঠাটের বসন্তে কেউ কেউ উভয় মধ্যম ব্যবহার করে থাকেন। ভাতখণ্ডে উভয় মধ্যমের ব্যবহার দেখিয়েছেন। তাঁর মতে এতে কোমল গান্ধারও ব্যবহার করা যায়।
আরোহণ: স গ, হ্ম দ র্ঋ র্স
অবরোহণ: র্ঋ ন দ প, হ্ম গ, হ্ম দ হ্ম গ ঋ স
ঠাট: পূরবী
জাতি: ঔড়ব-সম্পূর্ণ।
বাদীস্বর: র্স
সমবাদী স্বর: প
সময়: রাত্রি দ্বিতীয় প্রহর। বসন্ত ঋতুর যে কোনো সময়।
পকড়: হ্ম দ র্ঋ র্স, ন র্স র্ঋ ন দ প, গ হ্ম দ ন হ্ম গ
আরোহ:
অবরোহ:
পাকাড়:
চলন: ণ# স ম ম প ণ ধ প ম প জ্ঞ ম জ্ঞ র স
আরোহ-আবরোহ এই লিঙ্ক গুলোতে গিয়ে শুনে নিতে পারেন । লিংক ১ ।
কাজী নজরুল ইসলামের গানে রাগ বসন্ত:
নজরুলের অনেক গান রাগাশ্রয়ী। নির্দিষ্ট রাগের আশ্রয়ে যে গানগুলোতে সুর করা হয়েছে, সেগুলোর পুরো সুরে রাগের অবয়ব বজায় রাখার চেষ্টা থেকেছে; খুব বেশি রাগভ্রষ্ট হয়নি। তাই নজরুলের গানগুলো কান তৈরিতে বেশি উপযোগী বলে আমার কাছে মনে হয়।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের গানে বসন্ত:
কবিগুরু তার অনেক কম্পোজিশনে প্রচলিত রাগের আশ্রয় নিলেও অনেক সময় রাগের কাঠামোতে তিনি আটকে থাকতে চাননি। তাঁর সুরের পথ রাগের বাইরে চলে গেছে প্রায়শই। আমার কাঁচা কান যা বলে, তাতে বিশুদ্ধ রাগাশ্রয়ী গান হিসেবে তাঁর গান অনেক ক্ষেত্রেই খুব ভালো উদাহরণ নয়।
১.
আধুনিক গানে বসন্ত:
১. মধু বসন্ত আজি এলো ফিরিয়া (দীপালী নাগ)
গজলে বসন্ত:
ভজনে বসন্ত:
১.
ঠুমরিতে বসন্ত:
১.
অন্যান্য:
১.
যন্দ্রে বসন্ত:
সেতার:
১. ইমদাদখানী ঘরানার শহীদ পারভেজ খানের সেতারে – বসন্ত।
সরদ:
১.মাইহার ঘরানার খলিফা ওস্তাদ আলী আকবর খানের সরদে- বসন্ত।
২. পণ্ডিত বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের সরদে- বসন্ত।
খেয়াল:
১. রামপুর সহসওয়ান ঘরানার ওস্তাদ রশিদ খানের – পিয়া সাঙ্গ খেলু হোরি ….
২. আমীর খান সাহেব এর- বসন্ত।
৩. পণ্ডিত কুমার গান্ধর্বের কেদার – বসন্ত।
৪. জয়পুর ঘরানার শিল্পী কিশোরী আমনকারের গলায় – বসন্ত।
৫. পণ্ডিত মুকুল শিবপুত্রের- বসন্ত।
৬. বিদুষী শোভা মুডগালের- বসন্ত।
টিউটোরিয়াল:
যেকোনো রাগের স্বরের চলাফেরা বোঝার জন্য ২/৫ টি স্বর-মালিকা বা সারগম-গীত শোনা দরকার। স্বর মল্লিকার পাশাপাশি দু একটি লক্ষণ গীত (বা ছোট খেয়াল) শুনলে সহজ হতে পারে। লক্ষণ গীত মূলত শেখানো হয় রাগের লক্ষণগুলো সহজে ধরতে। লক্ষণ গীত ছোট খেয়াল প্রায় একই কাজ করে। অনলাইনে অনেক গুলো আছে। একটু খোঁজাখুঁজি করলে পেয়ে যাবেন। স্যাম্পল হিসেবে নিচের দুটো লিংক দেয়া হল।
১. রাগ বসন্তের স্বরমল্লিকা।
২. এনিসিআরটির টিউটোরিয়াল।
সম্পর্কিত রাগ:
পরজ, বাহার, পুরবী, সোহিনী, বসন্ত-মুখরি, বসন্তী-কেদার, শুদ্ধ-বসন্ত, বসন্ত-বাহার, বসন্ত-ললিত, পরজ-বসন্ত, বসন্ত-পঞ্চম (দক্ষিণী)
বসন্ত সম্পর্কে আরও জানার জন্য:
১. উইকি আর্টিকেল
২. অটোমেটেড ট্রান্সক্রিপশন প্রজেক্ট এর- ভীমপলশ্রী কেদার
Declaimer:
শিল্পীদের নাম উল্লেখের ক্ষেত্রে আগে জ্যৈষ্ঠ-কনিষ্ঠ বা অন্য কোন ধরনের ক্রম অনুসরণ করা হয়নি। শিল্পীদের সেরা রেকর্ডটি নয়, বরং ইউটিউবে যেটি খুঁজে পাওয়া গেছে সেই ট্রাকটি যুক্ত করা হল। লেখায় উল্লেখিত বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত যেসব সোর্স থেকে সংগৃহীত সেগুলোর রেফারেন্স ব্লগের বিভিন্ন যায়গায় দেয়া আছে। শোনার/পড়ার সোর্সের কারণে তথ্যের কিছু ভিন্নতা থাকতে পারে। আর টাইপ করার ভুল হয়ত কিছু আছে। পাঠক এসব বিষয়ে উল্লেখে করে সাহায্য করলে কৃতজ্ঞ থাকবো।
*** এই আর্টিকেলটির উন্নয়ন কাজ চলমান ……। আবারো আসার আমন্ত্রণ রইলো।
আরও দেখুন: