শ্রোতা সহায়িকা নোট সিরিজে আজকের রাগ – রাগ ভৈরব। এই আর্টিকেলটির উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। আপডেট পেতে আবারো আসার আমন্ত্রণ রইলো।
রাগ ভৈরব বা ভায়রোঁ
ভৈরব ঠাটের প্রথম রাগ ভৈরব। এতে রেখাব ও ধৈবত কোমল, শুদ্ধ মধ্যম এবং বাকি স্বরগুলি শুদ্ধ। জাতি = সম্পূর্ণ + সম্পূর্ণ, তবে আরোহণে রেখাব স্বরটিকে দুর্বল বা অল্পত্ব করে গাওয়া হয়। অবরোহণে কুশল গায়কগণ কোমল নিষাদ বিবাদী স্বর হিসেবে ব্যবহার করেন।
আরোহণ: স ঋ জ্ঞ ম প দ ণ র্স
অবরোহণ: র্স ণ দ প ম জ্ঞ ঋ স
বিবাদী স্বর প্রয়োগের কুশলতার জন্য রাগটির সৌন্দর্য্য অনেক গুনে বৃদ্ধি পায়। রাগটির প্রকৃতি গম্ভীর এবং এর সৌন্দর্য্য আন্দোলিত ধৈবত ও রেখাবের উপর নির্ভরশীল। মধ্যম ও রেখাবের মীড় অত্যন্ত মধুর ও প্রিতীদায়ক। সময় ঃ- প্রাতঃকাল, আরোহণ = সা ঋা গা মা পা দা না র্সা; অবরোহন ঃ- র্সা না দা পা মা গা ঋা সা। আবার অনেকে রেখাব স্বরকে দূর্বল করে ন্া সা গা মা পা দা না র্সা আরোহণ করেন। রাগটির পকড় সা, গা, মাপা, দা পা। পকড় এর অর্থ হলো পাকড়াও করা, খুব অল্প কথায় অর্থাৎ সারগাম প্রয়োগে রাগটির বিশেষ আমেজ নিয়ে আসা।
এ রাগটির প্রাচীনত্ব নিয়ে সংগীত পন্ডিতদের ভেতর মত পার্থক্য দেখা যায়। সত্তর শতাব্দীর পন্ডিত দামোদর তাঁর সংগীত দর্শন গ্রন্থে ভৈরবকে আদি রাগ এবং শ্রেষ্ঠ রাগ বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু দর্পনের আগে সংগীত সাহিত্যে ভৈরবের কোন উল্লেখ নেই, আবার এগার ও তের শতাব্দিতে ‘আর্য্য মার্গ সংগীত’ গ্রন্থে এর উল্লেখ আছে। মতঙ্গের ‘বৃহদ্দেশী’ ও জৈন সংগীতজ্ঞ পার্শদেবের ‘সংগীত সময়সার’ গ্রন্থে এর উল্লেখ আছে।
আর একদল পন্ডিত বলেন, অনার্যদের সংগীতের কলা কৌশল, তাদের রাগ, স্বর, তান আর্যরা আত্মসাৎ করে তাদের সংগীতকে সমৃদ্ধ করেন, সেই অনার্যদের ভেতর, হিমালয়ের উপত্যকায় এক জাতি বাস করতো; তাদের নাম ছিল ‘ভীরার’। এই ভীরাররা নাকি গন্ধর্বদের মত সংগীত কলায় পারদর্শী ছিল, এবং তাদের রাষ্ট্রীয় গানের ভেতর ভৈরবী এবং ভৈরব প্রধান ছিল। আর্যরা ভীরার জাতির নিকট থেকে এই রাগটি সংগ্রহ করে।
এই রাগের সম প্রকৃতি আর একটি রাগ আছে নাম ‘কালেংড়া’; তবে কালেংড়াতে বাদী ও সমবাদী ভিন্ন এবং রেখাব ও ধৈবতে আন্দোলন নেই। সুতরাং ভৈরব রাগটিতে রেখাব ও ধৈবত আন্দোলিত অবশ্যই করতে হবে, নচেৎ রাগের প্রকৃতি ফুটবে না, অথবা অন্য রাগ ‘কালেংড়া’ হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকবে।
এর প্রকৃতি গম্ভীর হওয়ার জন্য প্রারম্ভে ছোট ছোট অলংকারের প্রয়োগ করা উচিৎ হবে না, উত্তরাংগ রাগ হওয়ার জন্য এর সৌন্দর্য্য অবরোহ
বর্গে সুন্দর হয়। যেমনÑ মা গা ঋা সা, ঋা ঋা, সা, দ্া ন্াসা, পামাগঋা, সা, দপা, মাগঋা, গাপামাগাঋা, সা, ধৈবত স্বরের পর বেশ কিছুক্ষণ
আবস্থান করে পঞ্চম সুরে আসলে বড় সুন্দর লাগে।
রাগটি সন্ধি প্রকাশ (রাত্রির অবশান ও দিনের শুরু এই ক্ষণটিকে সন্ধি প্রকাশ বলে) হওয়ার জন্যে এবং প্রকৃতি গম্ভীর হওয়ার জন্যে; এর ভেতর শান্ত, মধুর, ও করুন রসের হদিস মেলে।
রাগটির বিস্তার ঃ
১. সা ঋা ঋা সা দ্া সা ঋা সা গঋা মাগাঋা ঋা সা।।
২. সা ঋা সা ন্দ্াসা ন্দ্া প্া প্দ্া সা ঋা গঋা মাগাঋা পামাগাঋা ঋা সা
৩. ন্াসা ঋা সা ন্সদ্া সাদ্া ন্দ্া প্া ম্াপ্াদ্া ন্া সা ঋা গঋা মাগাঋা গামাপামাগাঋা গাঋাঋা সা।
৪. ন্াসাঋা সা ন্াসাদ্া সা গামাপামাগাঋা গামাদা পা মাপামাগাঋা গামাপামাগাঋা ঋা সা।।
৫. সাগা মাপা দা পা মাপা মাগাঋা গামপামাগাঋা ঋা সা গা মপা দা পা
৬. সাঋাসা সাঋাগাঋাসা সাঋাগামাঋাঋাসা সাঋাগামাপাগা মাঋাঋাসা সাঋাগামাপাদাপামাগা মাঋাঋাসা সাঋাগামাপাদানাদাপামাগা মাঋাঋা সা সাঋাগামাপাদানার্সা র্সানাদাপামাগাঋাসা
৭. ন্াসামাগাঋাসা ন্াসাগামাপাগা মাঋাঋাসা ন্াসাগামাপাগা মা দা নদা পা মপা মগা ঋসা ন্াসাগামাপাদানার্সা নাদাপামাগাঋাসা।
৮. ন্সা গমা পগা মা দা নর্সা র্সর্ঋার্সনদা র্সানদা নদা পা গামানদা পা মগা মাগা মঋা গামাপা মাগা মঋা সা গা মপা দা পা।
৯. সদপদমপমগঋগমপমগঋসা সঋসন্দ্া ন্সা গাঋাগপাঋাসা গা মপা দা পা।
১০. মপা দা নর্সা নর্সা সর্দা নর্সা র্ঋা র্সানা র্সা দা পা মাগা মপা দা র্ঋা র্সা নদা দপা মগা মঋা গমপা মগা মঋা ঋা সা গা মপা দা পা
১১. সদা দা নদা পা পদা নর্সা র্ঋ সা নর্সা দা পা গা মপা দা পা মগা ঋা গামপামাগা ঋাসা।
১২. পা পা দা নর্সা র্সা নর্সা দা নর্সা র্ঋা র্সা নার্সাদা পা র্মা র্গা র্মা র্ঋা র্সা র্ঋা র্সা নর্সা দা পা মগা মপা দা পা মগা ঋা গমপমগা ঋা গমপমগা ঋা া সা ঋগা মপা দা পা।।
ভৈরব মুলত ভক্তি প্রধান রাগ।
কাজী নজরুল ইসলামের গানে ভৈরব:
নজরুলের অনেক গান রাগাশ্রয়ী। নির্দিষ্ট রাগের আশ্রয়ে যে গানগুলোতে সুর করা হয়েছে, সেগুলোর পুরো সুরে রাগের অবয়ব বজায় রাখার চেষ্টা থেকেছে; খুব বেশি রাগভ্রষ্ট হয়নি। তাই নজরুলের গানগুলো কান তৈরিতে বেশি উপযোগী বলে আমার কাছে মনে হয়।
১.
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের গানে ভৈরব:
কবিগুরু তার অনেক কম্পোজিশনে প্রচলিত রাগের আশ্রয় নিলেও অনেক সময় রাগের কাঠামোতে তিনি আটকে থাকতে চাননি। তাঁর সুরের পথ রাগের বাইরে চলে গেছে প্রায়শই। আমার কাঁচা কান যা বলে, তাতে বিশুদ্ধ রাগাশ্রয়ী গান হিসেবে তাঁর গান অনেক ক্ষেত্রেই খুব ভালো উদাহরণ নয়।
১.
আধুনিক গানে ভৈরব:
১.
গজলে ভৈরব:
১.
ভজনে ভৈরব:
১.
ঠুমরিতে ভৈরব:
১.
অন্যান্য:
১.
যন্দ্রে ভৈরব:
সেতার:
১. ইমদাদখানী ঘরানার শহীদ পারভেজ খানের সেতারে – ভৈরব।
সরদ:
১.মাইহার ঘরানার খলিফা ওস্তাদ আলী আকবর খানের সরদে- ভৈরব।
২. পণ্ডিত বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের সরদে- ভৈরব।
খেয়াল:
১. রামপুর সহসওয়ান ঘরানার ওস্তাদ রশিদ খানের – ভৈরব।
২. আমীর খান সাহেব এর- ভৈরব।
৩. পণ্ডিত কুমার গান্ধর্বের কেদার – ভৈরব।
৪. জয়পুর ঘরানার শিল্পী কিশোরী আমনকারের গলায় – ভৈরব।
৫. পণ্ডিত মুকুল শিবপুত্রের- ভৈরব।
৬. বিদুষী শোভা মুডগালের- ভৈরব।
টিউটোরিয়াল:
যেকোনো রাগের স্বরের চলাফেরা বোঝার জন্য ২/৫ টি স্বর-মালিকা বা সারগম-গীত শোনা দরকার। স্বর মল্লিকার পাশাপাশি দু একটি লক্ষণ গীত (বা ছোট খেয়াল) শুনলে সহজ হতে পারে। লক্ষণ গীত মূলত শেখানো হয় রাগের লক্ষণগুলো সহজে ধরতে। লক্ষণ গীত ছোট খেয়াল প্রায় একই কাজ করে। অনলাইনে অনেক গুলো আছে। একটু খোঁজাখুঁজি করলে পেয়ে যাবেন। স্যাম্পল হিসেবে নিচের দুটো লিংক দেয়া হল।
১. রাগ ভৈরবের স্বরমল্লিকা।
২. এনিসিআরটির টিউটোরিয়াল।
রিলেটেড রাগ:
আহীর-ভৈরব
দরবারী-কানাড়া সম্পর্কে আরও জানার জন্য:
২. অটোমেটেড ট্রান্সক্রিপশন প্রজেক্ট এর- ভৈরব কেদার
সিরিজের বিভিন্ন ধরনের আর্টিকেল সূচি:
Declaimer:
শিল্পীদের নাম উল্লেখের ক্ষেত্রে আগে জ্যৈষ্ঠ-কনিষ্ঠ বা অন্য কোন ধরনের ক্রম অনুসরণ করা হয়নি। শিল্পীদের সেরা রেকর্ডটি নয়, বরং ইউটিউবে যেটি খুঁজে পাওয়া গেছে সেই ট্রাকটি যুক্ত করা হল। লেখায় উল্লেখিত বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত যেসব সোর্স থেকে সংগৃহীত সেগুলোর রেফারেন্স ব্লগের বিভিন্ন যায়গায় দেয়া আছে। শোনার/পড়ার সোর্সের কারণে তথ্যের কিছু ভিন্নতা থাকতে পারে। আর টাইপ করার ভুল হয়ত কিছু আছে। পাঠক এসব বিষয়ে উল্লেখে করে সাহায্য করলে কৃতজ্ঞ থাকবো।
*** এই আর্টিকেলটির উন্নয়ন কাজ চলমান ……। আবারো আসার আমন্ত্রণ রইলো।