২ নং শিলাইদহ ইউনিয়ন বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। এটি ৬৪.৪১ কিমি২ (২৪.৮৭ বর্গমাইল) এলাকা জুড়ে অবস্থিত এবং ২০০১ সালের আদমশুমারীর হিসাব অনুযায়ী এখানকার জনসংখ্যা ছিল প্রায় ২৪,২৩৮ জন। ইউনিয়নটিতে মোট গ্রামের সংখ্যা ১৭টি ও মৌজার সংখ্যা ১৭টি। শিলাইদহ ইউনিয়নে রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিবিজড়িত শিলাইদহ রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি অবস্থিত।
২ নং শিলাইদহ ইউনিয়ন

এক নজরে ২নং শিলাইদহ ইউনিয়ন পরিষদ:
| বিষয় | পরিমাণ/সংখ্যা |
|---|---|
| জেলা সদর থেকে দূরত্ব | ১৯ কিমি |
| উপজেলা সদর থেকে দূরত্ব | ৯ কিমি |
| হোল্ডিং সংখ্যা | ৫,৪১১ |
| মোট খানার সংখ্যা | ৫,৪০০ |
| মোট জমির পরিমাণ | ৪,৫৬৫ একর |
| এক ফসলি জমি | ১,১৭৫ একর |
| দুই ফসলি জমি | ২,৪৬৫ একর |
| তিন ফসলি জমি | ৯৩৬ একর |
| শিক্ষার হার | ৬৫% |
| অগভীর নলকূপ | ২০০ টি |
| হস্তচালিত নলকূপ | ৩,৫০০ টি |
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়: ৫টি
রেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়: ৫টি
নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় (বালক): ১টি
নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়: ১টি
উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়: ১টি
মাদ্রাসা: ৩টি
কলেজ: ১টি
স্বাস্থ্যসেবা
স্বাস্থ্য কেন্দ্র: ১টি
কমিউনিটি ক্লিনিক: ৩টি
যোগাযোগ ও অবকাঠামো
কাঁচা রাস্তা: ৪০ কিমি
পাকা রাস্তা: ২৫ কিমি
খাল: ২টি
নদী: পদ্মা
খেয়াঘাট: ১টি
ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান
মসজিদ: ২৯টি
মন্দির: ২টি
গির্জা: ১টি
ক্লাব: ২টি
প্রশাসনিক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান
তহসিল অফিস: ১টি
ডাকঘর: ১টি
হাট-বাজার: ১টি
ব্যাংক: অগ্রণী ব্যাংক ও গ্রামীণ ব্যাংক
সামাজিক সুরক্ষা
দুস্থ মহিলা: ১,০০০ জন
ভি.জি.ডি কার্ডধারী: ১২৮ জন
বিধবা ভাতা: ২২৩ জন
বয়স্ক ভাতা: ৫০৮ জন
প্রতিবন্ধী ভাতা: ৪২ জন
মাতৃত্বকালীন ভাতা: ১৮ জন
ভোটার সংখ্যা
মোট ভোটার: ১৭,০৪৭ জন

২ নং শিলাইদহ ইউনিয়নের গ্রাম ভিত্তিক লোকসংখ্যা:
| ওয়ার্ড | গ্রাম | পুরুষ | মহিলা | মোট |
|---|---|---|---|---|
| ১ | কোমরকান্দী | 1054 | 1064 | 2118 |
| ১ | কান্দাবাড়ী | 890 | 864 | 1754 |
| ২ | বেলগাছি | 825 | 881 | 1706 |
| ২ | জাহেদপুর | 1539 | 1469 | 3008 |
| ৩ | নাউথী | 623 | 561 | 1184 |
| ৪ | খোর্দ্দবনগ্রাম | 702 | 247 | 949 |
| ৪ | লালাদ্বারীগ্রাম | 736 | 238 | 974 |
| ৫ | কসবা | 1680 | 1678 | 3358 |
| ৫ | দ্বারীগ্রাম | 506 | 1678 | 2184 |
| ৬ | মাজগ্রাম | 1748 | 1751 | 3499 |
| ৭ | খোরশেদপুর | 327 | 390 | 717 |
| ৭ | ছোটমাজগ্রাম | 310 | 331 | 641 |
| ৮ | কল্যানপুর | 1442 | 1731 | 3173 |
| ৯ | মির্জাপুর | 882 | 893 | 1775 |
যোগফল:
পুরুষ: ১৫,২৬৪ জন
মহিলা: ১৫,৭৩৬ জন
মোট: ৩১,০০০ জন
মানচিত্রে ২ নং শিলাইদহ ইউনিয়ন:

২ নং শিলাইদহ ইউনিয়নের ইতিহাস ও ঐতিহ্য:
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কসবা গ্রামে জমিদারি পরিচালনার সময় বসবাস করতেন। এখান থেকেই তিনি **”গীতাঞ্জলি”**সহ বহু সাহিত্যকর্ম রচনা করেন।
ঐতিহাসিক স্থানসমূহ:
শিলাইদহ রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি
গোপিনাথ বাড়ি (শিলাইদহ বাজার পূর্ব পাশে)
বিখ্যাত মাজার (উত্তর-পূর্ব পাশে)
যুগল শাহ পুকুর (উত্তর-পশ্চিমে, বর্তমানে পরিত্যক্ত)
পুরাতন ডাকঘর (উত্তরে, এখন বিলুপ্ত)
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের তহসিল অফিস (উত্তর-পশ্চিমে)
শেলী সাহেবের নীলকুঠি (নদীগর্ভে বিলীন)
দর্শনীয় স্থান:
| শিরোনাম | অবস্থান | যাতায়াত ব্যবস্থা |
|---|---|---|
| শিলাইদহ রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি | কসবা গ্রাম, শিলাইদহ ইউনিয়ন | কুষ্টিয়া থেকে বাস/সিএনজি/রিকশা/টেম্পুতে আলাউদ্দিন নগর মোড় হয়ে ১৩ কিমি। কুমারখালী উপজেলা থেকে দুর্গাপুর–বাখই–মির্জাপুর রুটে প্রায় ৭ কিমি। |
বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব:
🟨 গগন হরকরা
পুরো নাম: গগন চন্দ্র দাস
জন্মস্থান: আড়পাড়া গ্রাম, শিলাইদহ, কুষ্টিয়া
পরিচিতি: লোকসঙ্গীতশিল্পী, গীতিকার, বাউল সাধক
অবদান:
গগন হরকরা ছিলেন একজন বিশিষ্ট বাউল গীতিকার যিনি লোকসঙ্গীতের মাধ্যমে বাংলার সমাজ ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরেছেন। তিনি শিলাইদহ ডাকঘরের কর্মী ছিলেন এবং তাঁর গান ও ব্যক্তিত্বে মুগ্ধ হয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর সাথে আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
- গগনের গান “আমি কোথায় পাবো তারে” গানটির সুরে অনুপ্রাণিত হয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচনা করেন বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত “আমার সোনার বাংলা”।
- আরও একটি গান “ও মন, অসাড় মায়ায় ভুলে রবে” থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেন “যে তোমায় ছাড়ে ছাড়ুক”।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
গগন হরকরা ছিলেন একজন সময়ের চেয়ে অগ্রসর লোকশিল্পী, যিনি রবীন্দ্রনাথের মত সাহিত্যিককে প্রভাবিত করেছেন, যা বাংলা লোকসংগীতের ইতিহাসে বিরল।
🟨 গাজী হাবিবুর রহমান
পরিচিতি:
- বীর মুক্তিযোদ্ধা
- খ্যাতিমান বক্তা ও আবৃত্তিকার
- শিলাইদহ ইউনিয়ন পরিষদের দীর্ঘদিনের সফল চেয়ারম্যান
অবদান:
স্বাধীনতা যুদ্ধে তাঁর ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে স্থানীয় প্রশাসন, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও জনসেবায় তিনি ছিলেন একজন পথপ্রদর্শক।
তিনি আবৃত্তি ও বক্তৃতার মাধ্যমে দেশপ্রেম ও মানবিক মূল্যবোধ ছড়িয়েছেন। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দীর্ঘদিন সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন।
গুরুত্বপূর্ণ দিক:
- শিলাইদহের সাধারণ মানুষের মধ্যে দেশপ্রেম, ঐতিহ্য ও নৈতিক মূল্যবোধ জাগ্রত করতে ভূমিকা রেখেছেন।
- তাঁর স্মৃতি ধরে রাখার জন্য একটি স্মারক উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।
🟨 মোঃ আমানউল্লাহ আমান
জন্মস্থান: আড়পাড়া গ্রাম, শিলাইদহ
পরিচিতি: প্রাক্তন শিক্ষা সচিব, বাংলাদেশ সরকার
অবদান:
বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চতম পদে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে তিনি জাতীয় শিক্ষানীতির উন্নয়ন, মানোন্নয়ন এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমে অসামান্য অবদান রেখেছেন।
গুরুত্বপূর্ণ দিক:
- একজন গ্রামবাংলার সন্তান হিসেবে জাতীয় পর্যায়ে শিক্ষা ব্যবস্থায় অবদান রাখার ঘটনা অনুপ্রেরণাদায়ী।
- শিলাইদহবাসীর জন্য তিনি গর্বের প্রতীক।

আরও দেখুন:
