শুভ জন্মদিন নেতা ! – বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদ

[ শুভ জন্মদিন নেতা ! – বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদ ]

তখন কুষ্টিয়ার (ভারত-পাকিস্তান) সীমান্তে ভোর হয়ে আসছে।
পায়ে হেটে বর্ডার পার হচ্ছেন তাজউদ্দীন আহমদ। সাথে ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম।
সারা রাতের ক্লান্তিতে আর পা চলছে না। একটা ছোট্ট কালভার্টের উপর কিছুক্ষণ বিশ্রামের সিদ্ধান্ত হল।

নিজেদের মধ্যে টুকটাক আলোচনা হচ্ছে – কিভাবে ভারত সরকারের সাথে যোগাযোগ করা যায়?
এর মধ্যেই ভারতের বর্ডার গার্ডদের একটি প্লাটুন তাদের ঘিরে ফেলল।

আগমনের খবর আগে ভারত সরকারকে জানানো সম্ভব হয়নি। তাই অভ্যর্থনার প্রস্তুতি তো দুরে থাক, কেউ তাদের চেনেই না। অভ্যাগতদের বাহ্যিক অবস্থাও তথৈবচ। স্থান, কাল, হাল, কোন কিছুই – তাদের উপযুক্ত পরিচয়ের সাথে মেলে না।
এরা আবার নাকি প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাথে কথা বলতে চান !!!
গার্ডরা তো হেসেই অস্থির। রীতিমতো অসহায় অবস্থা।

অনেকক্ষণ আলাপ আলোচনা বাক বিতণ্ডা চলছে। তাজউদ্দীন চুপ করে বসে কৌতুক দেখছিলেন।

Tajuddin Ahmad- Our First Prime Minister | শুভ জন্মদিন নেতা ! - বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদ, আমাদের প্রথম প্রধানমন্ত্রী
Tajuddin Ahmad- Our First Prime Minister | তাজউদ্দিন আহমেদ, আমাদের প্রথম প্রধানমন্ত্রী

এসময় তিনি মুখ খুললেন।
কোন অনুরোধের স্বরে নয়। রীতিমতো অফিশিয়াল আদেশের স্বরে ওই দলের প্রধানকে আদেশ করলেন। বললেন তোমাদের কমান্ডিং অফিসারের সাথে আমাকে কন্টাক্ট করাও, দ্রুত।

ওদেরও কি যেন হল। কোন বিতর্ক না করে, মন্ত্রমুগ্ধের মত ওয়ারলেসে কানেক্ট করে দিল।
ওয়ারলেসে কথা বলার পর মুহূর্তে পরিস্থিতি বদলে গেল। একজন অফিসার এসে সসম্মানে তাদেরকে অভ্যর্থনা জানাল। তাদের নিয়ে যাবার বহরে অনেকগুলো গাড়ি এসে যোগ দিল।

(বঙ্গতাজের কোন এক জন্মদিনের স্মৃতিচারণে, ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলামের মুখে এই গল্প শুনেছিলাম)

পুরো মুক্তিযুদ্ধে প্রেরণায় ছিলেন বঙ্গবন্ধু। তার হয়ে অসীম সাহস আর দক্ষতায় মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেছিলেন বঙ্গতাজ। সম্মুখ সমরের পাশাপাশি বিদেশি কূটনৈতিক যুদ্ধ পরিচালনা করে গেছেন সাদামাঠা একটি অফিসে বসে। আর প্রতি মুহূর্তে আভ্যন্তরীণ কুচক্রীদের ষড়যন্ত্রের মোকাবেলা তো ছিলই। তার মুক্তিযোদ্ধারা পরিবারের সাথে থাকতে পারছে না বলে, বহু দুর থেকে দেখা করতে আসা স্ত্রী-সন্তানকে দেখা না দিয়ে ফিরিয়ে দিয়েছেন।

আজ সেই নেতার জন্মদিন।
এই দেশের জন্মের জন্য তাকে কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করি।

শুভ জন্মদিন নেতা,  শুভ জন্মদিন বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদ

আপনারা ছিলেন বলে আজ একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে মাথা তুলে হাটতে পারছি। পরিবার পরিজন নিয়ে ভাল আছি, আরও ভাল থাকার স্বপ্ন দেখতে পারছি। আপনার সেই নির্ঘুম অক্লান্ত দিনরাত্রির বিনিময়ে, আজ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসে নিশ্চিন্তে, সন্তানের সাথে খুনসুটি করতে করতে, কম্পিউটারের কোমল কিবোর্ডে লিখছি। আপনারা না থাকলে, আজ হয়ত কিবোর্ডের বদলে, বন্দুক হতে কোন এক জঙ্গলে বসে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের ভাবনা ভাবতাম।

আপনি যেখানেই থাকুন ভাল থাকুন- এই দোআ করি।

আরও দেখুন:

Leave a Comment