হ্যাকাথন ২০১২ – আমাদের তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য সম্ভাবনা
এ কাজে সাংগঠনিক ভাবে জড়িয়েছি বেশি কিছুদিন আগে। সময়ের অভাবে গুছিয়ে আপডেট দিতে পারছিলাম না বলে ক্ষমা প্রার্থী। পুরো বিষয়টির সামারি করে প্রতিযোগীদের জন্য সংক্ষেপে এই আপডেট দিলাম।
হ্যাকাথন ২০১২
হ্যাকাথন জিনিসটা কি?এটা এক ধরনের সমস্যা সমাধানের প্রতিযোগিতা। মাধ্যম – লজিকাল সমাধান ও তথ্য প্রযুক্তি। অনেকটা প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার মত। তবে সেগুলোর মতো শুধুমাত্র লজিক বা গাণিতিক সমস্যার সমাধান না। বরং তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে আমাদের জীবনের বাস্তবিক সমস্যার সমাধানের প্রতিযোগিতা।
প্রতিযোগিতার আয়োজনের ধরন বোঝাতে নাম দেয়া হয়েছে হ্যাকিং ম্যারাথন বা সংক্ষেপে হ্যাকাথন। হ্যাকিং মানে বোঝানে হয়েছে – কোন সমস্যার গভীরে ঢুকে তার মুল কারণ খুঁজে বের করা এবং সেটার কার্যকর সমাধান তৈরি করা। এই প্রতিযোগিতা একটানা প্রায় ৩৬ ঘণ্টা চলবে বলে নাম দেয়া হয়েছে ম্যারাথন।
এর আগে এরকম প্রতিযোগিতা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আয়োজিত হয়েছে। গত বছরের আয়োজন ছিল পানি সমস্যা নিয়ে। আগের প্রতিযোগিতাগুলোর মাধ্যমে উঠে আসা অনেকগুলো সমাধান ইতিমধ্যে সফল বাণিজ্যিক উদ্যোগে রূপান্তরিত হয়েছে।

কারা করছে?
বিশ্ব ব্যাংক এর সমন্বয়ে পার্টনার হিসেবে রয়েছে – কয়েকটি গুরুত্বপুর্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর, তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ছাড়াও নকিয়ার মত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান যুক্ত আছে। প্রযুক্তিতে বাংলাদেশ এই আয়োজনে সাংগঠনিক সহায়তা করছে।
স্যানিটেশন নিয়ে কি সমস্যা?
স্যানিটেশন মানে স্বাস্থ্যকর পয়নিস্কাষন ও পয়-ব্যবস্থাপনা । সহজ কথায় বলতে গেলে আমাদের প্রতিদিনের পায়খানা, প্রস্রাব ত্যাগের স্বাস্থ্যকর ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। এছাড়া সেই নোংরা নিষ্কাশনের কার্যকর ব্যবস্থাপনা। বিষয়টি আলোচনা খুব সুখকর না হলেও এটা একটা ভয়ানক বাস্তবিক সমস্যা। আমাদের দেশের এই ব্যবস্থা মানসম্মত না হবার কারণে, প্রতি বছর ৩০ হাজার কোটি টাকার অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়। এই ক্ষতি জিডিপির প্রায় ৬.৩ ভাগ। এর মধ্যে রোগবালাই জনিত কারণ প্রধান। তাই এটার সঠিক সমাধান করা জাতি হিসেবে এগিয়ে যাবার একটি প্রধান শর্ত। শুধুমাত্র এই সমস্যা পুরো সমাধান করতে পারলেই আমরা ২ ডিজিটের জিডিপিতে প্রবেশ করতে পারতাম।
তথ্য প্রযুক্তির সাথে সম্পর্ক:
তথ্য প্রযুক্তি কোন লাক্সারি আইটেম না। এটা বর্তমান সময়ে দিন বদলের সবচেয়ে কার্যকর হাতিয়ার। এই প্রযুক্তি চটি সেলাই থেকে চণ্ডী পাঠ পর্যন্ত সহজ করতে ব্যাবহার করা যায়। তার মাধ্যমে কিভাবে স্যানিটেশন সমস্যার কার্যকর সমাধান করা যায় – সেটা বুঝতেই এই প্রতিযোগিতা। আমাদের দেশেও যে এই হাতিয়ারের সুষ্ঠু ব্যাবহার করার মত একটি প্রজন্ম তৈরি হয়েছে। এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সেটা প্রমাণ করার সুযোগ এসেছে।
কখন, কোথায়, কিভাবে?
এই প্রতিযোগিতা শুরু হবে ৩০ শে নভেম্বর, ২০১২ সকাল ৯টায়। টানা ৩৬ ঘণ্টা চলার পরে শেষ হবে ১ ডিসেম্বর রাত ১০ টায়। অন্যান্য দেশের প্রতিযোগীরা একই সাথে ভিডিও কনফারেন্স এর মাধ্যমে অংশগ্রহণ করবে। এছাড়া ১৯ নভেম্বর একটি মেন্টরদের জন্য একটি ইভেন্ট আছে।
আয়োজনটি হবে রূপসী বাংলা হোটেলের বলরুমে। খাওয়া দাওয়া থাকবে। ক্লান্তি লাগলে ফ্লোরের এক কোনায় ম্যাট বিছিয়ে ন্যাপ নেবার ব্যবস্থা। ওই সময় বিশ্বের অন্য সব দেশে চলা হ্যাকাথনের লাইভ ফিড আসতে থাকবে ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে।
প্রতিযোগীদের গ্রুপে ভাগ করার পরে একজন করে মেন্টর দেয়া হবে। মেন্টর সমস্যা বুঝতে এবং সমাধান করতে সাহায্য করবেন। স্যাম্পল প্রব্লেম স্টেটমেন্ট ইতিমধ্যে প্রকাশ করা হয়েছে। এধরনের প্রব্লেম স্টেটমেন্টগুলো দেখানো হবে। সেখানে প্রব্লেম ওনারও উপস্থিত থাকবে। প্রতিযোগীরা চাইলে তাদেরকে প্রশ্ন করে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হতে পারবে। প্রতিযোগীরা তাদের নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ইচ্ছেমত সমস্যা বেছে নিতে পারবে। একই সমস্যা একাধিক গ্রুপের বেছে নেবার সুযোগ থাকবে। প্রতিযোগীরা সমস্যা নির্বাচন করার পর সেটার সমাধান নিয়ে কাজ শুরু করবে। প্রথম কাজ হবো সমস্যাটির লাজিকাল সমাধান। সমাধানের প্রেজেন্টেশন তৈরি। এরপর প্রোগ্রামিং এর মাধ্যমে তার প্রোটোটাইপ তৈরি করা।
হার জিত কিভাবে?
এখানে কোডের চেয়ে বড় পরীক্ষা কনসেপ্টের। যার কনসেপ্ট যত ভাল (মানে কার্যকর বলে মনে হবে) সে ততটা এগিয়ে থাকবে। ভাল প্রেজেন্টেশন খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভাল সমাধান করার পর সেটা ভালভাবে উপস্থাপন না করতে পারলে পুরো চেষ্টাটাই মাঠে মারা যেতে পারে। কেডিং এর বিষয়টি শুধুমাত্র প্রটোটাইপ তৈরি পর্যন্ত। এসব মিলিয়ে প্রতিটি প্রব্লেম গ্রুপের সবচেয়ে ভাল সমাধান কারি দল বিজয়ী হবে।
কেমন ধরনের দল চাই?
একটি টেকি টিম না। দরকার একটি সামাজিক বাস্তবতা জ্ঞানসম্পন্ন প্রযুক্তিতে দক্ষ টিম। কারণ – সমস্যাগুলোর সামাজিক প্রেক্ষাপট বুঝতে হবে। দেশের বর্তমান অবকাঠামো সম্পর্কে ধারনা থাকতে হবে। আর প্রযুক্তির মাধ্যমে সমাধানের জ্ঞান তো লাগবেই। এছাড়া থাকতে হবে সুন্দর প্রেজেন্টেশন তৈরি ও উপস্থাপনের দক্ষতা।
উদ্যোক্তাদের জন্য সুযোগ:
এরকম পরিবেশে একটি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য সম্পদ। তাই হার-জিত যাই হোক অংশগ্রহণই একটি বড় সুযোগ। বিজয়ী টিমকে তাদের সমাধান নিয়ে দেশের বাইরে যাবার সুযোগ থাকবে। সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো সেক্ষেত্রে সহায়তা করবে। টিম হারুক বা জিতুক – সমাধানগুলো প্রব্লেম ওনারের পছন্দ হলে তারা সেটা বাস্তবায়নের জন্য অর্থায়ন করবে। এছাড়া উপস্থিত কমার্শিয়াল কোম্পানিগুলো পছন্দসই কনসেপ্টে অর্থায়ন করবে। বিনিয়োগকারিকে আগ্রহী করতে পারলে বিনিয়োগ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। আর সেটাই উদ্যোক্তা মানসিকতার তরুণদের জন্য সবচেয়ে বড় সুযোগ। এখান থেকেই আমরা হয়ত একাধিক কোম্পানির জন্য বিনিয়োগ পেয়ে যাব।
বিস্তারিত তথ্য পেতে:
ওয়েব সাইট : http://hackathonbd.com/
ফেসবুক পাতা: https://www.facebook.com/SanitationHackathonBangladesh
এর আগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ আয়োজন হয়েছে। বাংলাদেশে এই আয়োজন এবারই প্রথম। সুযোগটি নিয়মিত পাবার জন্য এবারের সুযোগটিকে ঠিকমতো কাজে লাগানো দরকার।
তাহলে দেখা হচ্ছে ৩০ তারিখে রূপসী বাংলা হোটেলের বল রুমে 🙂
সুফি ফারুক ইবনে আবুবকর
সভাপতি, প্রযুক্তিতে বাংলাদেশ
আরও দেখুন: