অসুরের সুরলোকযাত্রা ( আগে যার নাম ছিল গান খেকো) সিরিজে আপনাকে স্বাগত জানাই। এটা যেহেতু মূলত আমার ব্যক্তিগত সঙ্গীত যাত্রার দিনলিপি, তাই নিজের কিছু কথা দিয়েই শুরু করি। সঙ্গীতের কোন বয়স নেই মানি। কিন্তু শাস্ত্রীয় সঙ্গীতটা যখন আমার হৃদয়ে, তখন গলায় লাগার বয়স চলে গেছে। পেশাদারী ব্যস্ততা, সামাজিক-পারিবারিক দায়-দায়িত্ব, সব কিছু মিলিয়ে সঙ্গীতকে গলায় বা হাতে ধারণ করার অবসর আর নেই। কিন্তু এ রোগ থেকে চাইলেই তো আর আরোগ্য লাভ হয়না। ক্রমে সঙ্গীতটা আমার – গরীবের ঘোড়া রোগের মতো হয়ে রয়ে গেল। গানের তেমন কিছু বুঝি না। কিন্তু সারাদিন গান শুনি, গান খাই, গান দেখি (স্বপ্নেও)।
অসুরের সুরলোকযাত্রা – গান খেকো সিরিজের সূচি
গানের প্রেমে কেউ কম্পোজার হয়, গাতক হয়, বাদক হয়, ক্রিটিক হয়। আমি বুঝলাম- আমাকে দিয়ে ওর কোনটাই হবে না। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম – শ্রোতা হবো। সেই মাইন্ডসেট নিয়ে লেখাপড়া শুরু করলাম। ভাবছিলাম বওয়া কাম (sitting job), সহজেই পারবো। কিন্তু এর মধ্যে ঢুকে দেখছি – ভাল শ্রোতা হয়ে ওঠা, চাট্টিখানি কথা নয়।
জীবনে হেরে যাবার অভ্যাস খুব বেশি নাই। তাই ভাবতে লাগলাম কোন রাস্তায় বের হওয়া যায়। একটা ২ নম্বরি বুদ্ধি বের করলাম। শুনেছিলাম – কোন বিষয় বোঝার সবচেয়ে সহজ উপায়, সে বিষয়ে একটা বই লিখে ফেলা ! কিন্তু আমি যেখানে সপ্তকই ঠিকমতো চিনি না, সেখানে সঙ্গীত বিষয়ে বই লেখার মুরোদ কি আমার হবে ? তাই শ্রোতাদের জন্য নতুন– একটা চোথা লেখার সিদ্ধান্ত নিলাম (পপি গাইড টাইপ)।
চোথার শিরোনাম – “গান খেকো।”
বিষয়বস্তু – কিভাবে হিন্দুস্থানি শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শোনা, বোঝা যায় এবং মজা নেয়া যায়।
এখনও আমি একজন শিক্ষানবিশ শ্রোতা। “গান খেকো” সেই যাত্রা পথের নোট খাতা।
চরম উত্তেজিত হয়ে, তাৎক্ষনিক অনুভব থেকে, অনেক ভুলভাল আত্মবিশ্বাসের সাথে লিখে ফেলছি। পরে কিছু বুঝতে পেরে কেটে-কুটে ঠিক করছি। বাকি ভুলগুলো আমার জ্ঞানের অভাবে থেকেই গেছে।
আমার মতো- যারা কোনদিন গান শেখেননি, অথচ শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের স্বাদ নেবার খায়েশ রাখেন, তাদের যন্ত্রণাটা আমি বুঝি। সেই কানার হাতি দেখার স্ট্রগলটা আমি জানি। আমার মতো সেই সেই অন্ধদের জন্যই নোটগুলো শেয়ার করার সাহস করলাম। এই “গান খেকো” শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে বিজ্ঞ কারও উপকারে আসবে না। ওহ হ্যাঁ, অনেক ভুল যেহেতু আছে, তাই কোন ভুল দেখলে ধরিয়ে দিলে- আনন্দিত হব, কৃতজ্ঞ থাকবো। “গান খেকো” সূচি টা গতানুগতিক রাখিনি। এই আর্টিকেলটিই সূচি। গান খেকোর বাকি আর্টিকেল গুলো এই আর্টিকেলের টেক্সটেই লিংক করা। আপনার বিস্তারিত পড়তে ইচ্ছে হলে লিংকে ক্লিক করতে হবে।
তো? শুরু করা যাক …
ছোটবেলা থেকে অনেক রকম গানবাজনা শোনা হয়েছে। টেপে, রেডিওতে, টেলিভিশনে বা অনুষ্ঠানে। কিছু শখ করে, আর কিছু এমনিতেই চারপাশ থেকে কানে ঢুকে পড়েছে। এর জন্য বিশেষ কোন খাটুনি করতে হয়নি। খুব পছন্দ হয়ে যাওয়া গানগুলো বারবার শোনার লোভে বড়জোর লিস্ট বানিয়ে রেকর্ড করানোর সামান্য শ্রম গেছে। কিন্তু গান বোঝার জন্য তেমন কোন বাড়তি চেষ্টা করতে হয়নি। সেগুলোর স্বাদ নেবার জন্য আলাদা কোন শিক্ষা নিতে হয়নি।
কিন্তু এই শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের জগতে এসে শুনলাম, এর মজা নিতে গেলেও শুধুই যে সময় দিয়ে গানটা বুঝতে হবে তা নয়, রীতিমতো গান শোনা শিখতে হবে।
শুরুতেই বেয়াড়া মন প্রশ্ন করে বসল:-
– দুনিয়ায় এত্ত গান থাকতে এত ঝামেলা করে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত কেন শুনবো?
– কান দিয়ে গান শোনা ছাড়া, গান বোঝার জন্য আলাদা আয়োজন আর পরিশ্রমই বা কেন করবো?
ব্লগ পড়তে গিয়ে আপনাদের মনে হতে পারে- আমার মতো তথ্য প্রযুক্তির কাঠখোট্টা পেশার একজন মানুষ কিভাবে জড়িয়ে গেল এই সুরের মায়ায়! সেই গল্প লিখেছিলাম বেঙ্গল মিউজিক ফেস্টিভ্যাল উপলক্ষে প্রকাশিত চার-বেলা চারদিক পত্রিকায়, “অসুরের সুরলোকযাত্রা” – শিরোনামে।
সঙ্গীতের মজা নিতে থিওরি জানাটা জরুরী নয়। কিন্তু আমার জানতে ইচ্ছে হয়েছিল বলে সেগুলোর উত্তর আমার খেরোখাতা থেকে তুলে দিলাম:-
– শাস্ত্রিয় সঙ্গীত, মার্গ সঙ্গীত, উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত বা রাগ সঙ্গীত জিনিসটা কী?
– তার মধ্যে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত কি?
– তার মধ্যে হিন্দুস্থানি শাস্ত্রীয় সঙ্গীত কি?
– এসব সঙ্গীতের সিস্টেমের পার্থক্যই বা কি?
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের ৭৬ এ আঁকা “Struggle” নামের পেইন্টিংটি দেখতে আমার ভাল লাগে। ছেলেবেলায় প্রথম দেখেছিলাম। প্রথম দেখে ভাল লাগলেও, আহামরি কিছু লাগেনি। তখন না জানতাম হাতে আঁকা তৈল চিত্রের মর্ম, না অনুমান করতে পারতাম জয়নুল আবেদিনের উচ্চতা। আজ তা সামান্য বুঝলেও – এ ছবির পটভূমি জানি না, ইতিহাস জানি না, কারিগরি বিষয় বা ক্রাফটম্যানশিপের উচ্চতার সবই আমার অজানা। আমি নিশ্চিত সেসব ডিটেইল জানলে, ভালোলাগাটা আরও বাড়ত। ছবিটার এরকম আরও অসংখ্য রূপ দেখতে পেতাম, যা আজও দেখি না। তবে এসব কিছু না জেনেও, দেখতে দেখতে অনেক ভাল লেগে গেছে। আজ যথেষ্ট ভাল লাগে বলেই বারবার দেখি। আমার মনে হয় আর্টের যেকোনো ফর্মই এরকম। যে যত ডিটেইল বুঝতে মনোযোগ দেবে, সে তত বেশি মজা পাবে।
তবে আর্টের অন্যান্য ফর্ম গুলোর মতো সঙ্গীতে ঢোকাটা ততটা কঠিন নয়। মজা পাবার আগের রাস্তাটা বোধহয় তত বেশি শুষ্ক নয়। যেকোনো বয়সী, যেকোনো ভাষা-ভাষী, যেকোনো মানের জানা-শোনা নিয়েই যাত্রা শুরু করা যাবে। শুরু থেকে মজাও পাওয়া যাবে। এরপর আরও মজা পাবার জন্য, মনোযোগ দিয়ে, সময় নিয়ে শুনতে থাকাটাই প্রধান শর্ত।
এ পর্যায়ে আপনার মনে হতে পারে- শাস্ত্রীয় সঙ্গীত মানে বহু রকম ঢঙ্গে গাওয়া গান বা বহু যন্ত্রের বাজনা শুনি। আসলে এর মধ্যে কমন বস্তুটা কি? শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শোনা মানে আসলে কি শোনা। সেই প্রশ্নের উত্তরের জন্য দেখুন “কি শুনবো” আর্টিকেলটি।
তবে যেকোনো যাত্রার প্রস্তুতি থাকা ভাল। তাতে যাত্রা সহজ আর আরামদায়ক হয়। তাই চলুন শোনার প্রস্ততি আর্টিকেলটি একটু পড়ে নেই।
সঙ্গীত রেকর্ড বা সরাসরি শুনতে পারেন। তবে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত পরিবেশনের কিছু ধারা থাকে। প্রতিটি গাইয়ে বা বাদক একটি ক্রমে সঙ্গীত পরিবেশন করেন। এই ক্রমটি তার ঘরানা, শিক্ষা, নিজস্বতা, মেজাজ, অডিয়েন্স এবং মাধ্যমের উপরে নির্ভর করে। সেটার জন্য পড়া যেতে পারে – হিন্দুস্থানি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের পরিবেশনা ‘র বেসিক বিষয়গুলো।
এতদুর পর্যন্ত যখন এসেছেন, তখন আশা করছি আপনি শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শুনতে চান।
আর শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শোনার জন্য এর ব্যাকরনের সাধারন জ্ঞান হলে সুবিধা হয়। তাই শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ব্যাকরন বা শাস্ত্র- সূচি যুক্ত করলাম।
যেখানে – নাদ, স্বর, সুর, শ্রুতি, সপ্তক এর পরিচিতি আছে। তাল, ঠেকা এবং লয় এর বেসিক আলোচনাও যুক্ত আছে।
এর পাশাপাশি স্বরলিপি পড়ার পদ্ধতি সম্পর্কে একটা ধারনা নিলে পরের রাগের নোটগুলো পড়তে সুবিধা হবে।
এসব সম্পর্কে ধারনা হবার পর যাওয়া যাক রাগ এর কাছে।
প্রথমে রাগ শাস্ত্র সূচি থেকে রাগের প্রাথমিক ধারনা নিয়ে তারপরে একে একে রাগ গুলোর সাথে পরিচয় হওয়া যাবে।
আমি যে রাগগুলো শুনে কিছুটা বুঝেছি, সেটা সহজে বোঝার মতো কিছু নোট করি। একটি সুচি তৈরি করে সেটার সাথে ওই রাগ চোথা গুলোর লিংক করে দিলাম। দেখতে পারেন- সকল রাগের নোটের সূচি (এই সুচি সাথে যুক্ত আছে রাগের নোটগুলো। একে একে রাগের নোট যোগ হবে)। রাগের পরিবার ভিত্তিক/রাগ অঙ্গ ভিত্তিক গ্রুপ। ঠাট ভিত্তিক রাগের গ্রুপ। সময় ভিত্তিক রাগের গ্রুপ। একটি ঋতু ভিত্তিক রাগ গানের সূচি । রাগের রস ভিত্তিক গ্রুপ। সকল প্রচলিত-অপ্রচলিত রাগের একটি তালিকা।
এছাড়া শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে বিভিন্ন ধারায় গানবাজনা হয়।
আমার শোনা রীতি/ধারা (Genre) থেকে কিছু বেছে দিলাম – উত্তর ভারতীয়/হিন্দুস্থানি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের রীতি/ধারা নোটে।
শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে ঘরানা একটি গুরুত্বপুর্ন বিষয়। সঙ্গীতের ঘরানা সূচিতে যুক্ত করা হয়েছে ঘরানা বিষয়ক আলোচনা, বিভিন্ন নামকরা ঘরানার পরিচিতি, বিভিন্ন রিসোর্সের লিংক।
আমি মিউজিক থেরাপি বা সুরচিকিৎসা এখনও ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি। তবে পড়তে গিয়ে যেসব তথ্য কমবেশি পেয়েছি সেগুলো সুরচিকিৎসা সূচি শিরোনামে যুক্ত করলাম।
আপনি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের জগতে ঢুকলে পড়লে বিভিন্ন শিল্পী ও সঙ্গীতকার সম্পর্কে জানতে ইচ্ছে হবে।
জানতে ইচ্ছে হবে বিভিন্ন – সুরকার, গীতিকার, বাদ্যকর, কণ্ঠশিল্পী এবং তাদের কাজ সম্পর্কে। এদের সম্পর্কে যা শুনেছি-পড়েছি টুকে রাখার চেষ্টা করেছি। সেই নোটগুলোর তালিকা চাইলে ঘুরে আসতে পারেন – শিল্পী সূচি ।
প্রিয় গানের বাণী জমানোর একসময় শখ ছিল। কিন্তু বারবার সেসব খাতা হারিয়ে গিয়েছে। এখন চেষ্টা করছি ওয়েবে যে প্রিয় গানের বাণী /কালাম /বান্দিশ এর একটা সংগ্রহশালা তৈরির।
শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের জগতের ওস্তাদ পণ্ডিতদের গল্পগুলো দারুণ মজার বিষয়। গানের পাশাপাশি দারুণ মনযোগ দিয়ে পড়েছি সেসব গল্প। এটার একটা সংগ্রহের চেষ্টা রয়েছে- গানের টুকরো গপ্পো সেকশনে।
গান শোনা শেখার যাত্রা শুরু করার পর থেকে বহু বই, নোট, ওয়েব রেফারেন্স দেখা হয়েছে।
আপনাদেরও কাজে লাগতে পারে ভেবে সেটার একটা পাতা তৈরি করে নিয়মিত আপডেটের চেষ্টা করবো- গান খেকো রেফারেন্স নামে।
*** আর একটি বিষয়। সবচেয়ে জরুরী বিষয়। এটা কমপ্লিট কোন গাইড বই না। এটা খেরোখাতার লেখা। বেশিরভাগই অসম্পূর্ণ। যখন সমই পাই তখন একটু করে জুড়তে থাকি।
সূচি:
- সঙ্গীতের ব্যাকরণ সূচি
- রাগ শাস্ত্র সূচি
- রাগ চোথা সূচি
- পরিবার ভিত্তিক/রাগ অঙ্গ ভিত্তিক রাগের গ্রুপ
- ঠাট ভিত্তিক রাগের গ্রুপ
- সময় ভিত্তিক রাগের গ্রুপ
- ঋতু ভিত্তিক রাগ/গান সূচি
- ধর্ম ভিত্তিক সঙ্গীতের সূচি
- রস ভিত্তিক গ্রুপ
- ঘরানা ভিত্তিক গান বাজনা
- শিল্পী সূচি
- সঙ্গীতের রীতি/ধারা (Music Genre) সূচি
- প্রিয় গানের বানী/কালাম/বান্দিশ সূচি
সুফি ফারুক ইবনে আবুবকর এর সঙ্গীত নিয়ে বাইরে প্রকাশিত অন্যান্য লেখা :
- সঙ্গীত গুরুকুল : সঙ্গীত কি
ঘোষনা [ Declaimer ]:
“গান খেকো” সিরিজে শিল্পীদের নাম উল্লেখের ক্ষেত্রে আগে জ্যৈষ্ঠ-কনিষ্ঠ বা অন্য কোন ধরনের ক্রম অনুসরণ করা হয়নি। শিল্পীদের সেরা রেকর্ডটি নয়, বরং ইউটিউবে যেটি খুঁজে পাওয়া গেছে সেই ট্র্যাকটি যুক্ত করা হল। লেখায় উল্লেখিত বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত যেসব সোর্স থেকে সংগৃহীত সেগুলোর রেফারেন্স ব্লগের বিভিন্ন জায়গায় দেয়া আছে। শোনার/পড়ার সোর্সের কারণে তথ্যের কিছু ভিন্নতা থাকতে পারে। আর টাইপ করার ভুল হয়ত কিছু আছে। পাঠক এসব বিষয়ে উল্লেখে করে সাহায্য করলে কৃতজ্ঞ থাকবো।
*** এই আর্টিকেলটির উন্নয়ন কাজ চলমান ……। আবারো আসার আমন্ত্রণ রইলো।
3 thoughts on “অসুরের সুরলোকযাত্রা সিরিজ সূচি [ গান খেকো ]”